পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে ミ○○ ভাবের রসে অভিষিক্ত অপূর্ব প্রতিভাকে —আমি যে স্পষ্ট অনুভব করছি, ওর মধ্যে প্রতিক্ষণে আমি নূতন প্রাণ ঢেলে দিচ্ছি, ও আমার নিজেরই স্বষ্টি। সেদিন অনেক অনুরোধ করে সন্দীপ তার একটি বিশেষ ভক্ত বালক অমূল্যচরণকে আমার কাছে এনেছিলেন, একদও পরেই আমি দেখতে পেলুম, তার চোখের তারার মধ্যে একটা নূতন দীপ্তি জলে উঠল, বুঝলুম সে আস্তাশক্তিকে দেখতে পেয়েছে, বুঝতে পারলুম ওর রক্তের মধ্যে আমারই স্থষ্টির কাজ আরম্ভ হয়েছে। পরদিন সন্দীপ আমাকে এসে বললেন, এ কী মন্ত্র তোমার, ও বালক তো আর সেই বালক নেই, ওর পলতেয় এক মুহূতে শিখ ধরে গেছে। তোমার এ আগুনকে ঘরের মধ্যে লুকিয়ে রাখবে কে ? একে একে সবাই আসবে। একটি একটি করে প্রদীপ জ্বলতে জলতে একদিন যে দেশে দেয়ালির উৎসব লাগবে ! নিজের এই মহিমার নেশায় মাতাল হয়েই আমি মনে মনে ঠিক করেছিলুম, ভক্তকে আমি বরদান করব। আর এও আমার মনে ছিল আমি যা চাইব তাকে কেউ ঠেকাতে পারবে না । সেদিন সন্দীপের কাছ থেকে ফিরে এসেই চুল খুলে ফেলে আমি নতুন করে চুল বঁধিলুম। ঘাড়ের থেকে এটে চুলগুলোকে মাথার উপরের দিকে টেনে তুলে আমার মেম আমাকে একরকম খোপা বাধতে শিখিয়েছিলেন আমার স্বামী আমার সেই খোপা খুব ভালোবাসতেন, তিনি বলতেন, ঘাড় জিনিসটা যে কত স্বন্দর হতে পারে তা বিধাতা কালিদাসের কাছে প্রকাশ না করে আমার মতো অ-কবির কাছে খুলে দেখালেন,—কবি হয়তো বলতেন, পদ্মের মৃণাল, কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, যেন মশাল, তার উর্ধের্ব তোমার কালো খোপার কালো শিখা উপরের দিকে জলে উঠেছে । এই বলে তিনি আমার সেই চুল-তোলা ঘাড়ের উপর—হায় রে, সে-কথা আর কেন ? তার পরে তাকে ডেকে পাঠালুম। আগে এমন ছোটোখাটো সত্যমিথ্যা নানা ছুতোয় তার ডাক পড়ত—কিছুদিন থেকে ডাকবার সব উপলক্ষ্যই বন্ধ হয়ে গেছে ; বানাবার শক্তিও নেই । brー○e