পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩৬ রবীন্দ্র-রচনাবলী আমি কলকাতায় পড়বার বৃত্তি দিয়েছি। এরা একদিন দল বেঁধে আমার কাছে এসে উপস্থিত। বললে, আমাদের শুকসায়রের হাট থেকে বিলিতি সুতে র্যাপার প্রভৃতি একেবারে উঠিয়ে দিতে হবে । আমি বললুম, সে অামি পারব না। তারা বললে, কেন, আপনার লোকসান হবে ? বুঝলুম, কথাটা আমাকে একটু অপমান করে বলবার জন্তে । আমি বলতে ৰাচ্ছিলুম, আমার লোকসান নয়, গরিবের লোকসান । মাস্টারমশায় ছিলেন, তিনি বলে উঠলেন, ই, ওঁর লোকসান বই কি, সে লোকসান তো তোমাদের নয় । তারা বললে, দেশের জন্তে— মাস্টারমশায় তাদের কথা চাপ দিয়ে বললেন, দেশ বলতে মাটি তো নয়, এই সমস্ত মানুষই তো । তা তোমরা কোনোদিন একবার চোখের কোণে এদের দিকে তাকিয়ে দেখেছ ? আর আজ হঠাৎ মাঝখানে পড়ে এরা কী কুন থাবে আর কী কাপড় পরবে তাই নিয়ে অত্যাচার করতে এসেছ, এরা সইবে কেন, আর এদের সইতে দেব কেন ? তারা বললে, আমরা নিজেরাও তো দিশি মুন দিশি চিনি দিশি কাপড় ধরেছি । তিনি বললেন, তোমাদের মনে রাগ হয়েছে, জেদ হয়েছে, সেই নেশায় তোমরা যা করছ খুশি হয়ে করছ । তোমাদের পয়সা আছে, তোমরা দু-পয়সা বেশি দিয়ে দিশি জিনিস কিনছ, তোমাদের সেই খুশিতে ওরা তো বাধা দিচ্ছে না। কিন্তু ওদের তোমরা যা করাতে চাচ্ছ সেটা কেবল জোরের উপরে । ওরা প্রতিদিনই মরণবাচনের টানাটানিতে পড়ে ওদের শেষ-নিশ্বাস পর্যস্ত লড়ছে কেবলমাত্র কোনোমতে টিকে থাকবার জন্তে—ওদের কাছে দুটো পয়সার দাম কত সে তোমরা কল্পনাও করতে পার না,—ওদের সঙ্গে তোমাদের তুলনা কোথায় ? জীবনের মহলে বরাবর তোমরা এক কোঠায়, ওরা আর-এক কোঠায় কাটিয়ে এসেছে—আর আজ তোমাদের দায় ওদের কাধের উপর চাপাতে চাও, তোমাদের রাগের ঝাল ওদের দিয়ে মিটিয়ে নেবে ? আমি তো একে কাপুরুষতা মনে করি। তোমরা নিজে যতদূর পর্যন্ত পার করো, মরণ পর্যস্ত, আমি বুড়োমাতুষ, নেতা বলে তোমাদের নমস্কার করে পিছনে পিছনে চলতে রাজি আছি, কিন্তু ওই গরিবদের স্বাধীনতা দলন করে তোমরা যখন স্বাধীনতার জয়পতাকা আস্ফালন করে ৰেড়াবে, তখন আমি তোমাদের বিরুদ্ধে দাড়াব, তাতে যদি মরতে হয় সেও স্বীকার ।