পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sety রবীন্দ্র-রচনাবলী কোনোদিন দেখি নি। আমি বেশ বুঝতে পারলুম, কিছুদিন থেকে ওঁর হৃদয়ের মধ্যে একটা বেদন নি:শব্দে জমে আসছে—সে কেবল আমাকে ভালোবাসেন বলে । সেই বেদনাতেই ওঁর ধৈর্ষের বtধ ভিতরে ভিতরে ক্ষয় করে দিয়েছে । মেডিকাল কলেজের ছাত্র বলে উঠল, আপনার বয়সে বড়ো, আপনাদের সঙ্গে তর্ক আমরা করব না। তাহলে এক কথায় বলুন, আপনাদের হাট থেকে বিলিতি মাল আপনারা সরাবেন না ? আমি বললুম, না সরাব না, কারণ, পে-মাল আমার নয়। এম. এ. ক্লাসের ছাত্রটি ঈষৎ হেসে বললে, কারণ, তাতে আপনার লোকসান আছে । মাস্টারমশায় বললেন, ই, তাতে ওঁর লোকসান আছে, স্বতরাং সে উনিই বুঝবেন । তখন ছাত্রের সকলে উচ্চৈঃস্বরে “বন্দেমাতরম্‌” বলে চীৎকার করে বেরিয়ে গেল । এর কিছুদিন পরেই মাস্টারমশায় পঞ্চুকে আমার কাছে নিয়ে এসে উপস্থিত । ব্যাপার কী । ওদের জমিদার হরিশ কুণ্ডু পঞ্চুকে এক-শ টাকা জরিমান করেছে। কেন, ওর অপরাধ কী ? ও বিলিতি কাপড় বেচেছে ! ও জমিদারকে গিয়ে হাতে পায়ে ধরে বললে, পরের কাছে ধার-করা টাকায় কাপড় কখানা কিনেছে এই গুলো বিক্রি হয়ে গেলেই ও এমন কাজ আর কখনো করবে না। জমিদার বললে, সে হচ্ছে না, আমার সামনে কাপড়গুলো পুড়িয়ে ফেল তবে ছাড়া পাবি। ও থাকতে না পেরে হঠাৎ বলে ফেললে, আমার তো সে-সামর্থ্য নেই, আমি গরিব ; আপনার যথেষ্ট আছে, আপনি দাম দিয়ে কিনে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলুন । শুনে জমিদার লাল হয়ে উঠে বললে, হারামজাদা, কথা কইতে শিখেছ বটে,—লাগাও জুতি । এই বলে একচেটি অপমান তো হয়েই গেল, তার পরে এক-শ টাকা জরিমান । এরাই সন্দীপের পিছনে পিছনে চীংকার করে বেড়ায়, বন্দেমাতরম্ এর দেশের সেবক ! কাপড়ের কী হ’ল ? পুড়িয়ে ফেলেছে । সেখানে আর কে ছিল ? লোকের সংখ্যা ছিল না, তার চীংকার করতে লাগল, বন্দেমাতরম্ । সেখানে সন্দীপ ছিলেন তিনি একমুঠো ছাই তুলে নিয়ে বললেন, ভাই সব, বিলিতি ব্যবসার