পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨8ર রবীন্দ্র-রচনাবলী পঞ্চু অবাক হয়ে বললে, আমার মামী তো বহুকাল হল মারা গেছে। তার উত্তর, প্রথম পক্ষের মামী মারা গেছে বটে, দ্বিতীয় পক্ষের অভাব হয় নি । কিন্তু মামার মৃত্যুর অনেক পরে যে মামী মরেছে, দ্বিতীয় পক্ষের তো সময় ছিল না । স্ত্রীলোকটি স্বীকার করলে দ্বিতীয় পক্ষটি মৃত্যুর পরের নয় মৃত্যুর পূর্বের। সতিনের ঘর করবার ভয়ে বাপের বাড়ি ছিল, স্বামীর মৃত্যুর পরে প্রবল বৈরাগ্যে সে বৃন্দাবনে চলে যায় ; কুণ্ডু-জমিদারের আমলার এ-সব কথা কেউ কেউ জানে, বোধ করি প্রজাদেরও কারও কারও জানা আছে, আর জমিদার যদি জোরে হাক দেয় তবে বিবাহের সময়ে যারা নিমন্ত্রণ খেয়েছিল তারাও বেরিয়ে আসতে পারে । সেদিন দুপুরবেলা পঞ্চুর এই দুগ্রহ নিয়ে আমি যখন খুব ব্যস্ত আছি এমন সময় অন্তঃপুর থেকে বিমলা আমাকে ডেকে পাঠালেন । আমি চমকে উঠলুম, জিজ্ঞাসা করলুম, কে ডাকছে ? বললে, রানীমা । বড়োরানীমা ? না, ছোটোরানীমা । ছোটোরানী ? মনে হল এক-শ বছর ছোটোরানী আমাকে ডাকে নি । বৈঠকখানা-ঘরে সবাইকে বসিয়ে রেখে আমি অস্তঃপুরে চললুম। শোবার ঘরে বিমলাকে দেখে আর ও আশ্চর্য হলুম যখন দেখা গেল, সর্বাঙ্গে, বেশি নয় অথচ বেশ একটু সাজের আভাস আছে। কিছুদিন এই ঘরটার মধ্যেও যত্নের লক্ষণ দেখি নি, সব এমন এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল যে, মনে হত, যেন ঘরটা স্বদ্ধ অন্যমনস্ক হয়ে গেছে। ওরই মধ্যে আগেকার মতো আজ একটু পারিপাট্য দেথতে পেলুম। আমি কিছু না বলে বিমলার মুখের দিকে চেয়ে দাড়িয়ে রইলুম। বিমলার মুখ একটু লাল হয়ে উঠল, সে ডান হাত দিয়ে তার বা হাতের বালা দ্রুতবেগে ঘোরাতে ঘোরাতে বললে, দেখো, সমস্ত বাংলাদেশের মধ্যে কেবল আমাদের এই হাটটার মধ্যেই বিলিতি কাপড় আসছে, এটা কি ভালো হচ্ছে ? আমি জিজ্ঞাস করলুম, কী করলে ভালো হয় ? ওই জিনিসগুলো বের করে দিতে বলে না। জিনিসগুলো তো আমার নয় । কিন্তু হাট তো তোমার । 卷 হাট আমার চেয়ে তাদের অনেক বেশি যারা ওই হাটে জিনিস কিনতে আসে ।