পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে २8¢ আমাদের উদ্ধার করে আনতে হবে—যে-মেয়ে তার নিপুণ হাতে আমাদের সেই অভিযানের জয়পতাকা তৈরি করে দিচ্ছে সেই আমাদের সহধর্মিণী, আর ঘরের কোণে যে আমাদের মায়াজাল বুনছে, তার ছদ্মবেশ ছিন্ন করে তার মোহমুক্ত সত্যকার পরিচয় যেন আমরা পাই,—তাকে আমাদের নিজেরই কামনার রসে-রঙে অপসরী সাজিয়ে তুলে যেন নিজের তপস্তা করতে না পাঠাই। আজ আমার মনে হচ্ছে আমার জয় হবে,—আমি সহজের রাস্তায় দাড়িয়েছি, সহজ চোখে সব দেখছি— আমি মুক্তি পেয়েছি, আমি মুক্তি দিলুম, যেখানে আমার কাজ সেইখানেই আমার উদ্ধার । আমি জানি বেদনায় বুকের নাড়িগুলা আবার এক-একদিন টনটন করে উঠবে। কিন্তু সেই বেদনাকেও আমি এবার চিনে নিয়েছি—তাকে আমি আর শ্রদ্ধা করতে পারব না। আমি জানি সে কেবলমাত্রই আমার—তার দাম কিসের ? যে-দুঃখ বিশ্বের সেই তো আমার গলার হার হবে । হে সত্য, বাচাও, আমাকে বাচাও,— কিছুতেই আমাকে ফিরে যেতে দিয়ে না ছলনার ছদ্মস্বৰ্গলোকে । আমাকে একলাপথের পথিক যদি কর সে-পথ তোমারই পথ হ’ক— আমার হৃৎপিণ্ডের মধ্যে তোমার জয়ভেরী বেজেছে আজ । সন্দীপের আত্মকথা সেদিন অশ্রুজলের বাধ ভাঙে আর কি। আমাকে বিমলা ডাকিয়ে আনলে কিন্তু খানিকক্ষণ তার মুখ দিয়ে কথা বের হল না, তার দুই চোখ ঝকঝক করতে লাগল। বুঝলুম নিখিলেক্স কাছে কোনো ফল পায় নি। যেমন করে হ’ক ফল পাবে সেই অহংকার ওর মনে ছিল কিন্তু সে-আশা আমার মনে ছিল না । পুরুষেরা যেখানে দুর্বল, মেয়েরা সেখানে তাদের খুব ভালো করেই চেনে কিন্তু পুরুষেরা যেখানে খাটি পুরুষ মেয়েরা সেখানকার রহস্ত ঠিক ভেদ করতে পারে না। আসল কথা, পুরুষ, মেয়ের কাছে রহস্ত, আর মেয়ে, পুরুষের কাছে রহস্ত, এই যদি না হবে, তাহলে এই দুটো জাতের ভেদ জিনিসটা প্রকৃতির পক্ষে নেহাত একটা অপব্যয় হত । অভিমান । যেটা দরকার সেটা ঘটল না কেন, সে-হিসেব মনে নেই, কিন্তু, আমি যেটা মুখ ফুটে চাইলুম সেটা কেন ঘটল না এইটেই হল খেদ । ওদের ওই আমির দাবিটাকে নিয়ে যে কত রঙ কত ভজি, কত কান্না কত ছল, কত হাবভাব তার আর