পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে Ꮥ8> হাট হয়ে গেলে মিরজানের খালি নৌকো ঘাটে বাধা ছিল । মাঝিও ছিল না। নায়েব কৌশল করে একটা যাত্রার আসরে তাদের নিমন্ত্ৰণ করিয়েছিল। সেই রাত্রে নৌকোটাকে খুলে স্রোতের মাঝখানে নিয়ে গিয়ে তাকে ফুটো করে তার মধ্যে রাবিশের বস্তা চাপিয়ে তাকে ডুবিয়ে দেওয়া হল । মিরজান সমস্তই বুঝলে। সে একেবারে আমার কাছে এসে কাদতে কঁদিতে হাত জোড় করে বললে, হজুর গোস্তাকি হয়েছিল, এখন— আমি বললুম, এখন সেটা এমন স্পষ্ট করে বুঝতে পারলে কী করে । তার জবাব না দিয়ে সে বললে, সে-নৌকোখানার দাম দু-হাজার টাকার কম হবে না, হজুর । এখন আমার স্থশ হয়েছে—এবারকার মতো কসুর যদি মাপ করেন— বলে সে আমার পায়ে জড়িয়ে ধরল। তাকে বললুম, আর দিন-দশেক পরে আমার কাছে আসতে। এই লোকটাকে যদি এখন দু-হাজার টাকা দেওয়া যায় তা হলে একে কিনে রাখতে পারি। এরই মতো মানুষকে দলে আনতে পারলে তবে কাজ হয়। কিছু বেশি করে টাকা জোগাড় করতে না পারলে কোনো ফল হবে না। বিকেলবেলায় বিমল। ঘরে আসবামাত্র চৌকি থেকে উঠে তাকে বললুম, রানী, সব হয়ে এসেছে, আর দেরি নেই, এখন টাকা চাই । বিমলা বললে, টাকা ? কত টাকা ? আমি বললুম, খুব বেশি নয়, কিন্তু যেখান থেকে হ’ক টাকা চাই । বিমলা জিজ্ঞাসা করলে, কত চাই বলুন। আমি বললুম, আপাতত কেবল পঞ্চাশ হাজার মাত্র । টাকার সংখ্যাটা শুনে বিমলা ভিতরে ভিতরে চমকে উঠলে কিন্তু বাইরে সেটা গোপন করে গেল । বার বার সে কী করে বলবে যে, পারব না । আমি বললুম, রানী, অসম্ভবকে সম্ভব করতে পার তুমি । করেওছ। কী যে করেছ যদি দেখাতে পারতুম তো দেখতে। কিন্তু এখন তার সময় নয় ; একদিন হয়তো সময় আসবে। এখন টাকা চাই । বিমলা বললে, দেব । আমি বুঝলুম, বিমলা মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে ওর গয়না বেচে দেবে। আমি বললুম, তোমার গয়না এখন হাতে রাখতে হবে, কখন কী দরকার হয় বলা योंध्र नीं । 聯 বিমলা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল । আমি বললুম, তোমার স্বামীর টাকা থেকে এ টাকা নিতে হবে। esسسb