পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে Հ( ) দুঃখের মুক্তো আমাদের রাজকোষে জমা করে দিতে গিয়েই তবে তার সন্ধান পেয়েছে। এমনি করে পুরুষের পক্ষে নেওয়াই হচ্ছে যথার্থ দান, আর মেয়েদের পক্ষে দেওয়াই হচ্ছে যথার্থ লাভ । বিমলার কাছে খুব একট। বড়ো হঁক হেঁকেছি। মনের ধর্মই নাকি আপনার সঙ্গে না-হুক ঝগড়া করা, তাই প্রথমটা একটা খটকা লেগেছিল । মনে হয়েছিল, এটা বড়ে বেশি কঠিন হল । একবার ভাবলুম, ওকে ডেকে বলি, না, তোমার এ-সব ঝঞ্চাটে গিয়ে কাজ নেই, তোমার জীবনে কেন এমন অশাস্তি এনে দেব। ক্ষণকালের জন্যে ভুলে গিয়েছিলুম, পুরুষজাত এইজন্তেই তো সকর্মক, আমরা অকর্মকদের মধ্যে ঝঞ্চাট বাধিয়ে অশাস্তি ঘটিয়ে তাদের অস্তিত্বকে সার্থক করে তুলব ষে। আমরা আজ পর্যন্ত মেয়েদের যদি কাদিয়ে না আসতুম তা হলে তাদের দুঃখের ঐশ্বর্যভাণ্ডারের দরজা যে অঁাটাই থাকত। পুরুষ যে ত্রিভুবনকে কঁদিয়ে ধন্ত করবার জন্যেই। নইলে তার হাত এমন সবল, তার মুঠে এমন শক্ত হবে কেন । বিমলার অন্তরাত্মা চাইছে যে, আমি সন্দীপ তার কাছে খুব বড়ো দাবি করব, তাকে মরতে ডাক দেব। এ না হলে সে খুশি হবে কেন ? এতদিন সে ভালো করে কঁদিতে পায় নি বলেই তো আমার পথ চেয়ে বসে ছিল । এতদিন সে কেবলমাত্র সুখে ছিল বলেই তো আমাকে দেথবামাত্র তার হৃদয়ের দিগস্তে দুঃখের নববর্ষ। একেবারে নীল হয়ে ঘনিয়ে এল । আমি যদি দয়া করে তার কান্না থামাতেই চাই তাহলে জগতে আমার দরকার ছিল কী । আসলে আমার মনের মধ্যে যে একটুখানি খটকা বেধেছিল তার প্রধান কারণ এটা যে টাকার দাবি । টাকা জিনিসটা যে পুরুষমানুষের। ওটা চাইতে যাওয়ার মধ্যে একটু ভিক্ষুকতা এসে পড়ে। সেই জন্যে টাকার অঙ্কটাকে বড়ো করতে হল । এক-আধ হাজার হলে সেটাতে অত্যন্ত চুরির গন্ধ থাকে, কিন্তু পঞ্চাশ হাজারটা হল ডাকাতি । তা ছাড়া, আমার খুব ধনী হওয়া উচিত ছিল । এতদিন কেবলমাত্র টাকার অভাবে আমার অনেক ইচ্ছা পদে পদে ঠেকে গেছে ; এটা, আর যাকে হ’ক, আমাকে কিছুতেই শোভা পায় না। অামার ভাগ্যের পক্ষে এটা অন্তায় যদি হত তাকে মাপ করতুম কিন্তু এট। রুচিবিরুদ্ধ সুতরাং অমার্জনীয়। বাসা ভাড়া করলে মাসে মাসে আমি যে তার ভাড়ার জন্তে মাথায় হাত দিয়ে ভাবব, আর রেলে চাপবার সময় অনেক চিন্তা করে টাকার থলি টিপে টিপে ইন্টারমিডিয়েটের টিকিট কিনব এটা আমার মতো মানুষের পক্ষে তো দুঃখকর নয়, হাস্তকর। আমি বেশ দেখতে পাই নিখিলের মতো