পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬৮ க் রবীন্দ্র-রচনাবলী বৈঠকখানার ঘরে এসে দেখি মাস্টারমশায় বসে আছেন। তখন ভিতরে ভিতরে আবেগে আমার মন দুলছে । মাস্টারমশায়কে দেখে আমি অন্য কোনো কথা জিজ্ঞাসা করবার আগে বলে উঠলুম, মাস্টারমশায়, মুক্তিই হচ্ছে মানুষের সব-চেয়ে বড়ো জিনিস। তার কাছে আর-কিছুই নেই, কিছুই না। মাস্টারমশায় আমার এই উত্তেজনায় আশ্চর্য হয়ে গেলেন। কিছু না বলে আমার দিকে চেয়ে রইলেন । আমি বললুম, বই পড়ে কিছুই বোঝা যায় না। শাস্ত্রে পড়েছিলুম, ইচ্ছাটাই বন্ধন, সে নিজেকে বাধে অন্তকে বাবে । কিন্তু শুধু কেবল কথা ভয়ানক ফঁাকা । সত্যি যেদিন পাখিকে খাচী থেকে ছেড়ে দিতে পারি সেদিন বুঝতে পারি পাখিই আমাকে ছেড়ে দিলে। যাকে আমি খাচায় বাধি সে আমাকে আমার ইচ্ছেতে বাধে, সেই ইচ্ছের বাধন যে শিকলের বাধনের চেয়ে শক্ত। আমি আপনাকে বলছি পৃথিবীতে এই কথাটি কেউ বুঝতে পারছে না। সবাই মনে করছে, সংস্কার আর কোথাও করতে হবে । আর কোথাও না, কোথাও না, কেবল ইচ্ছের মধ্যে ছাড়া | মাস্টারমশায় বললেন, আমরা মনে করি, যেটা ইচ্ছে করেছি সেটাকে হাতে করে পাওয়াই স্বাধীনতা, –কিন্তু, আসলে, যেটা ইচ্ছে করেছি সেটাকে মনের মধ্যে ত্যাগ করাই স্বাধীনতা । আমি বললুম, মাস্টারমশায়, আমন করে কথায় বলতে গেলে টাক-পড়া উপদেশের মতো শোনায় ; কিন্তু যখনই চোখে ওকে আভাসমাত্রেও দেখি তখন যে দেখি ওইটেই অমৃত । দেবতারা এইটেই পান করে অমর। সুন্দরকে আমরা দেখতেই পাই নে যতক্ষণ না তাকে আমরা ছেড়ে দিই। বুদ্ধই পৃথিবী জয় করেছিলেন, আলেকজাণ্ডার করেন নি, এ-কথা যে তখন মিথ্যেকথা যখন এটা শুকনো গলায় বলি, এই কথা কবে গান গেয়ে বলতে পারব ? বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের এই সব প্রাণের কথা ছাপার বইকে ছাপিয়ে পড়বে কবে, একেবারে গঙ্গোত্রী থেকে গঙ্গার নিবারের মতো ? ** হঠাৎ মনে পড়ে গেল মাস্টারমশায় কদিন ছিলেন না-কোথায় ছিলেন তা জানিও নে। একটু লজ্জিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলুম, আপনি ছিলেন কোথায় ? মাস্টারমশায় বললেন, পঞ্চুর বাড়িতে। পঞ্চুর বাড়িতে ? এই চার দিন সেখানেই ছিলেন ? ই, মনে ভাবলুম ষে-মেয়েটি পঞ্চুর মামী সেজে এসেছে তার সঙ্গেই কথাবার্তা কয়ে দেখব। আমাকে দেখে প্রথমটা সে একটু আশ্চর্ষ হয়ে গেল -ভদ্রলোকের