পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে ՀԵՏ যে আপনাকে দেয় । ওরা আপনার প্রাণের ভিতর থেকে সস্তানকে জন্ম দেয় পালন করে, বাহির থেকে নয়। এই দানই তো সত্য দান । এই বলে সন্দীপ আমার দিকে চেয়ে বললে, রানী, আজ তুমি যা দিলে এ যদি কেবলমাত্র টাকা হত তাহলে আমি এ চুতুম না, তুমি আপনার প্রাণের চেয়ে বড়ো জিনিস দিয়েছ। মানুষের বোধ হয় দুটো বুদ্ধি আছে । আমার একটা বুদ্ধি বুঝতে পারে সন্দীপ আমাকে ভোলাচ্ছে, কিন্তু আমার আর একটা বুদ্ধি ভোলে । সন্দীপের চরিত্র নেই, সন্দীপের শক্তি আছে। সেই জন্যে ও যে-মুহুর্তে প্রাণকে জাগিয়ে তোলে সেই মুহূর্তেই মৃত্যুবাণও মারে । দেবতার অক্ষয় তুণ ওর হাতে আছে কিন্তু তৃণের মধ্যে দানবের অসু । সন্দীপের রুমালে সব গিনি ধরছিল না, সে বললে, রানী তোমার একখানি রুমাল আমাকে দিতে পার ? অামি রুমাল বের করে দিতেই সেই রুমালটি নিয়ে সে মাথায় ঠেকালে, তার পরেই আমার পায়ের কাছে বসে পড়ে আমাকে প্রণাম করে বললে, দেবী তোমাকে এই প্রণামটি দেবার জন্তেই ছুটে এসেছিলুম, তুমি আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলে। তোমার ওই ধাক্কাই আমার বর। ওই ধাক্কা আমি মাথায় করে নিয়েছি । বলে মাথায় যেখানে লেগেছিল সেইখানটা আমাকে দেখিয়ে দিলে । আমি কি সত্যি ভুল বুঝেছিলুম ? সন্দীপ কি দুই হাত বাড়িয়ে দিয়ে তখন আমাকে প্রণাম করতেই এসেছিল ? তার মুখে চোখে হঠাৎ ষে-মত্ততা ফেনিয়ে উঠল, সে তো, মনে হল, অমূল্যও দেখতে পেয়েছিল । কিন্তু স্তবগানে সন্দীপ এমন আশ্চর্য স্বর লাগাতে জানে যে, তর্ক করতে পারি নে, সত্য দেখবার চোখ যেন কোন আফিমের নেশায় বুজে আসে । সন্দীপকে আমি যে-আঘাত করেছি সে-আঘাত সে আমাকে দ্বিগুণ করে ফিরিয়ে দিলে, তার মাথার ক্ষত আমার বুকের ভিতরে রক্তপাত করতে লাগল । সন্দীপের প্রণাম যখন পেলুম আমার চুরি তখন মহিমান্বিত হয়ে উঠল। টেবিলের উপরকার গিনিগুলি সমস্ত লোকনিন্দাকে ধর্মবুদ্ধির সমস্ত বেদনাকে উপেক্ষা করে ঝক ঝক করে হাসতে লাগল । আমারই মতো অমূল্যেরও মন ভুলে গেল। ক্ষণকালের জন্তে সন্দীপের প্রতি তার যে-শ্রদ্ধা প্রতিরুদ্ধ হয়েছিল সে আবার বাধামুক্ত হয়ে উছলে উঠল, আমার পূজায় এবং সীপের পূজায় তার হৃদয়ের পুষ্পপাত্রটি পূর্ণ হয়ে গেল—সরল বিশ্বাসের কী নিষ্কমুধা ভোরবেলাকার শুকতারার আলোটির মতো তার চোখ থেকে বিকীর্ণ হতে br-\9&