পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sb"く রবীন্দ্র-রচনাবলী লাগল। আমি পূজা দিলেম, আমি পূজা পেলেম, আমার পাপ জ্যোতির্ময় হয়ে উঠল। অমূল্য আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হাত জোড় করে বললে, বন্দে মাতরম্। কিন্তু স্তবের বাণী তো সব সময়ে শুনতে পাই নে। নিজের মনের ভিতর থেকে নিজের পরে নিজের শ্রদ্ধাকে বাচিয়ে রাখবার সম্বল আমার যে কিছুই নেই। আমার শোবার ঘরে ঢুকতে পারি নে। সেই লোহার সিন্দুক আমার দিকে ভ্ৰকুটি করে থাকে, আমাদের পালঙ্ক আমার দিকে যেন একটা নিষেধের হাত বাড়ায় । আপনার ভিতরে আপনার এই অপমান থেকে ছুটে পালাতে ইচ্ছে করে—কেবলই মনে হয় সন্দীপের কাছে গিয়ে আপনার স্তব শুনি গে । আমার অতলস্পর্শ গ্লানির গহবর থেকে জগতে সেই একটুমাত্র পূজার বেদী জেগে আছে—সেখান থেকে যেখানেই পা বাড়াই সেইখানেই শূন্ত । তাই দিনরাত্রি ওই বেদী আঁকড়ে পড়ে থাকতে চাই। স্তব চাই, স্তব চাই, দিনরাত্রি স্তব চাই,—ওই মদের পেয়ালা একটুমাত্র খালি হতে থাকলেই আমি আর বাচি নে। তাই সমস্ত দিনই সন্দীপের কাছে গিয়ে তার কথা শোনবার জন্যে আমার প্রাণ র্কাদছে—আমার অস্তিত্বের মূল্যটুকু পাবার জন্তে আজ পৃথিবীর মধ্যে সনদীপকে আমার এত দরকার । আমার স্বামী দুপুরবেলা যখন খেতে আসেন আমি তার সামনে বসতে পারি নে— অথচ না-বসাটা এতই বেশি লজ্জা যে, সেও আমি পারি নে—আমি তার একটু পিছনের দিকে এমন করে বসি যে, তার সঙ্গে আমার মুখোমুখি ঘটে না । সেদিন তেমনি করে বসে আছি তিনি খাচ্ছেন এমন সময় মেজোরানী এসে বসলেন, বললেন, ঠাকুরপো, তুমি ওই সব ডাকাতির শাসানি-চিঠি হেসে উড়িয়ে দাও, কিন্তু আমার ভয় হয়। আমাদের এবারকার প্রণামীর টাকাটা তুমি এখনো ব্যাস্কে পাঠিয়ে দাও নি ? আমার স্বামী বললেন, না সময় পাই নি । মেজোরানী বললেন, দেখে ভাই, তুমি বড়ো অসাবধান, ও-টাকাটস্বামী হেসে বললেন, সে যে আমার শোবার ঘরের পাশের ঘরে লোহার সিন্দুকে আছে। যদি সেখান থেকে নেয় বলা যায় কি ? আমার ও-ঘরেও যদি চোর ঢোকে তাহলে কোনদিন তোমাকেও চুরি হতে পারে । ওগো আমাকে কেউ নেবে না, ভয় নেই তোমার। নেবার মতো জিনিস তোমার আপনার ঘরেই আছে। না ভাই, ঠাট্ট না, তুমি ঘরে টাকা রেখে না।