পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२b°8 রবীন্দ্র-রচনাবলী সর্বনেশে। তা আমার কাছে ধরা পড়তেই হবে, আমি তো আর পুরুষমানুষ নই! আমাকে ভোলাবি কী দিয়ে ? আমি বললুম, তোমার মনে এতই যদি ভয় থাকে তবে আমার যা-কিছু আছে তোমার কাছে না-হয় জামিন রাখি, যদি কিছু লোকসান করি তো কেটে নিয়ো । মেজোরানী হেসে বললেন, শোনো একবার ছোটোরানীর কথা শোনো । এমন লোকসান আছে যা ইহকাল-পরকালে জামিন দিয়ে উদ্ধার হয় না। আমাদের এই কথাবার্তার মধ্যে আমার স্বামী একটি কথাও বললেন না। তার খাওয়া হয়ে যেতেই তিনি বাইরে চলে গেলেন, আজকাল তিনি আর বিশ্রাম করতে ঘরের মধ্যে বসেন না । আমার অধিকাংশ দামি গয়না ছিল খাজাঞ্চির জিন্মায়। তবু আমার নিজের কাছে যা ছিল তার দাম ত্রিশ-পয়ত্রিশ হাজার টাকার কম হবে না। আমি সেই গয়নার বাক্স নিয়ে মেজোরানীর কাছে খুলে দিলুম, বললুম, মেজোরানী, আমার এই গয়না রইল তোমার কাছে। এখন থেকে তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পার । মেজোরানী গালে হাত দিয়ে বললেন, ওমা, তুই যে অবাক করলি । তুই কি সত্যি ভাবিস তুই আমার টাকা চুরি করবি এই ভয়ে রাত্রে আমার ঘুম হচ্ছে না ? আমি বললুম, ভয় করতেই বা দোষ কী । সংসারে কে কাকে চেনে বলে, মেজোরানী । মেজোরানী বললেন, তাই আমাকে বিশ্বাস করে শিক্ষা দিতে এসেছ বুঝি ? আমার নিজের গয়না কোথায় রাখি ঠিক নেই, তোমার গয়না পাহারা দিয়ে আমি মরি আর কি । চারদিকে দাসৗচাকর ঘুরছে, তোমার ও গয়না তুমি নিয়ে যাও ভাই । মেজোরানীর কাছ থেকে চলে এসেই বাইরের বৈঠকখানা-ঘরে অমূল্যকে ডেকে পাঠালুম। অমূল্যর সঙ্গে সঙ্গে দেখি সন্দীপ এসে উপস্থিত । আমার তখন দেরি করবার সময় ছিল না—আমি সনীপকে বললুম, অমূল্যর সঙ্গে আমার একটু বিশেষ কথা আছে, আপনাকে একবার— সন্দীপ কাঠ-হাসি হেসে বললে, অমূল্যকে আমার থেকে আলাদা করে দেখ না কি ? তুমি যদি আমার কাছ থেকে ওকে ভাঙিয়ে নিতে চাও তাহলে আমি ওকে ঠেকিয়ে রাখতে পারব না। আমি এ-কথার কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে দাড়িয়ে রইলুম। সন্দীপ বললে,