পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*○ob" রবীন্দ্র-রচনাবলী সন্দীপ আর থাকতে পারলে না—একেবারে গর্জে উঠল, তুমি ! তুমি আমাকে অপমান করবে ! তোমার কী না আমার কাছে ধরা পড়েছে, বলে তো ? তোমার ষে— ওর মুখ দিয়ে আর কথা বেরোল না। সন্দীপ যে মন্ত্রব্যবসায়ী, মন্ত্র যে-মুহূতে"। খাটে না সে-মুহূর্তে ই ওর আর জোর নেই—রাজা থেকে একেবারে রাখাল হয়ে যায়। দুর্বল ! দুর্বল ! ও যতই রূঢ় হয়ে উঠে কর্কশ কথা বলতে লাগল ততই আনন্দে আমার বুক ভরে উঠল। আমাকে বধিবার নাগপাশ ওর ফুরিয়ে গেছে, আমি মুক্তি পেয়েছি। বঁাচা গেছে, বাচা গেছে। অপমান করে, অামাকে অপমান করো, এইটেই তোমার সত্য, আমাকে স্তব ক’রো না, সেইটেই মিথ্যা । এমন সময় আমার স্বামী ঘরের মধ্যে এলেন । অন্য দিন সন্দীপ মুহূর্তেই আপনাকে যে-রকম সামলে নেয় আজ তার সে-শক্তি ছিল না। আমার স্বামী তার মুখের দিকে চেয়ে একটু আশ্চর্য হলেন। আগে হলে আমি এতে লজ্জ পেতুম । কিন্তু স্বামী যাই মনে করুন না আমি আজ খুশি হলুম। আমি ওই দুর্বলকে দেখে নিতে চাই। আমরা দুজনেই স্তব্ধ হয়ে রইলুম দেখে আমার স্বামী একটু ইতস্তত করে চৌকিতে বসলেন, বললেন, সন্দীপ, আমি তোমাকেই খুজছিলুম, শুনলুম এই ঘরেই আছ । সন্দীপ কথাটার উপর একটু বিশেষ ঝোক দিয়ে বললে, ই, মক্ষীরানী সকালেই আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন । আমি যে মউচাকের দাসমক্ষিকা, কাজেই হুকুম শুনেই সব কাজ ফেলে চলে আসতে হল । স্বামী বললেন, কাল কলকাতায় যাচ্ছি তোমাকে যেতে হবে । সন্দীপ বললে, কেন বলো দেখি ? আমি কি তোমার অনুচর নাকি ? আচ্ছ, তুমিই কলকাতায় চলে, আমিই তোমার অনুচর হব। কলকাতায় আমার কাজ নেই । সেইজন্যেই তো কলকাতায় যাওয়া তোমার দরকার । এখানে তোমার বডড বেশি কাজ । আমি তো নড়ছি নে । তাহলে তোমাকে নাড়াতে হবে । জোর ? হা জোর । আচ্ছা, বেশ, নড়ব। কিন্তু জগংটা তো কলকাতা আর তোমার এলেকা এই দুই ভাগে বিভক্ত নয় । ম্যাপে আরও জায়গা আছে ।