পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○>bゲ রবীন্দ্র-রচনাবলী সইতে পারলেন না। মনে হল মুছা যাব। তার পরে আমার শিরার বাধন যেন ছিড়ে ফেলে আমার বুকের বেদনা কান্নার জোয়ারে ভেসে বেরিয়ে পড়ল। বুকের মধ্যে র্তার পা চেপে ধরলুম-ওই পায়ের চিহ্ন চিরজীবনের মতো ওইখানে আঁকা হয়ে যায় না কি ? এইবার তো সব কথা খুলে বললেই হত। কিন্তু এর পরে কি আর কথা আছে ? থাকৃ গে আমার কথা । তিনি আস্তে আস্তে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন । আশীৰ্বাদ পেয়েছি। কাল যে-অপমান আমার জন্তে আসছে সেই অপমানের ডালি সকলের সামনে মাথায় তুলে নিয়ে আমার দেবতার পায়ে সরল হয়ে প্রণাম করতে পারব। কিন্তু এই মনে করে আমার বুক ভেঙে যাচ্ছে, আজ ন-বছর আগে যে-নহবত বেজেছিল সে আর ইহজন্মে কোনো দিন বাজবে না। এ-ঘরে আমাকে বরণ করে এনেছিল যে ! ওগো, এই জগতে কোন দেবতার পায়ে মাথা কুটে মরলে সেই বউ চন্দন-চেলি পরে সেই বরণের পিড়িতে এসে দাড়াতে পারে ? কত দিন লাগবে আর—কত যুগ, কত যুগাস্তর—সেই ন-বছর আগেকার দিনটিতে আর-একটিবার ফিরে যেতে ? দেবতা নতুন স্বষ্টি করতে পারেন কিন্তু ভাঙা স্বষ্টিকে ফিরে গড়তে পারেন এমন সাধ্য কি তার অাছে ? নিখিলেশের আত্মকথা আজ আমরা কলকাতায় যাব । স্বথদুঃখ কেবলই জমিয়ে তুলতে থাকলে বোঝা ভারি হয়ে ওঠে। কেননা বসে থাকাটা মিথ্যে, সঞ্চয় করাটা মিথ্যে । আমি যে এই ঘরের কর্তা এটা বানানো জিনিস—সত্য এই যে আমি জীবনপথের পথিক । ঘরের কর্তাকে তাই বারেবারে ঘা লাগবে—তার পরে শেষ আঘাত আছে মৃত্যু । তোমার সঙ্গে আমার যে মিলন সে-মিলন চলার মুখে-যতদূর পর্যন্ত একপথে চলা গেল ততদূর পর্যন্তই ভালো—তার চেয়ে বেশি টানাটানি করতে গেলেই মিলন হবে বাধন । সেবাধন আজ রইল পড়ে—এবার বেরিয়ে পড়লুম—চলতে চলতে যেটুকু চোখে-চোখে মেলে, হাতে-হাতে ঠেকে সেইটুকুই ভালো। তার পরে ? তার পরে আছে অনন্ত জগতের পথ, অসীম জীবনের বেগ,—তুমি আমাকে কতটুকু বঞ্চনা করতে পার, প্রিয়ে ? সামনে যে বঁশি বাজছে কান দিয়ে যদি শুনি তো শুনতে পাই, বিচ্ছেদের