পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে ●〉為 সমস্ত ফাটলগুলোর ভিতর দিয়ে তার মাধুর্যের ঝরনা ঝরে পড়ছে। লক্ষ্মীর অমৃতভাণ্ডার ফুরোবে না বলেই মাঝে মাঝে তিনি আমাদের পাত্র ভেঙে দিয়ে কাদিয়ে হাসেন । আমি ভাঙা পাত্র কুড়োতে যাব না, আমি আমার অতৃপ্তি বুকে নিয়েই সামনে চলে যাব । মেজোরানীদিদি এসে বললেন, ঠাকুরপো, তোমার বইগুলো সব বাক্স ভরে গোরুর গাড়ি বোঝাই করে যে চলল তার মানে কী বলে তো । আমি বললুম, তার মানে ওই বইগুলোর উপর থেকে এখনো মায়া কাটাতে পারি নি । মায়া কিছু কিছু থাকলেই যে বাচি । কিন্তু এখানে আর ফিরবে না নাকি ? আনাগোনা চলবে কিন্তু পড়ে থাকা আর চলবে না । সত্যি নাকি ? তাহলে একবার এস, একৰার দেখো’সে কত জিনিসের উপরে আমার মায়া —এই বলে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন । র্তার ঘরে গিয়ে দেখি ছোটোবড়ো নানা রকমের বাক্স আর পুটলি । একট। বাক্স খুলে দেখালেন, এই দেখো ঠাকুরপো, আমার পান-সাজার সরঞ্জাম। কেয়াখয়ের গুড়িয়ে বোতলের মধ্যে পুরেছি—এই সব দেখছ এক-এক টিন মসলা । এই দেখো তাস, দশপচিশও ভুলি নি, তোমাদের না পাই আমি খেলবার লোক জুটিয়ে নেবই। এই চিরুনি তোমারই স্বদেশী চিরুনি, আর এই— কিন্তু ব্যাপারটা কী মেজোরানী ? এ-সব বাক্সয় তুলেছ কেন ? আমি যে তোমাদের সঙ্গে কলকাতায় যাচ্ছি। সে কী কথা ? ভয় নেই ভাই, ভয় নেই, তোমার সঙ্গেও ভাব করতে যাব না, ছোটোরানীর সঙ্গেও ঝগড়া করব না। মরতেই তো হবে তাই সময় থাকতে গঙ্গাতীরের দেশে আশ্রয় নেওয়া ভালো—ম’লে তোমাদের সেই নেড়া-বটতলায় পোড়াবে সে-কথা মনে হলে আমার মরতে ঘেন্না ধরে,— সেইজন্তেই তো এতদিন ধরে তোমাদের জালাচ্ছি। এতক্ষণ পরে আমার এই বাড়ি যেন কথা কয়ে উঠল। আমার বয়স যখন ছয় তখন ন-বছর বয়সে মেজোরানী আমাদের এই বাড়িতে এসেছেন । এই বাড়ির ছাদে দুপুরবেলায় উচু পাচিলের কোণের ছায়ায় বসে ওঁর সঙ্গে খেলা করেছি।