পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২০ ब्ररौठ-ब्रळ्नांबलौ বাগানে আমড়াগাছে চড়ে উপর থেকে কাচা আমড়া ফেলেছি, তিনি নিচে বসে সেগুলি কুচি-কুচি করে তার সঙ্গে চুন লঙ্কা ধনেশাক মিশিয়ে অপথ্য তৈরি করেছেন। পুতুলের বিবাহের ভোজ উপলক্ষ্যে যে-সব উপকরণ ভাড়ার-ঘর থেকে গোপনে সংগ্ৰহ করার প্রয়োজন ছিল তার ভার ছিল আমারই উপরে, কেননা ঠাকুরমার বিচারে আমার কোনো অপরাধের দণ্ড ছিল না। তার পরে যে-সব শৌখিন জিনিসের জন্ত দাদার পরে তার আবদার ছিল সে-আবদারের বাহক ছিলুম আমি,—আমি দাদাকে বিরক্ত করে করে যেমন করে হ’ক কাজ উদ্ধার করে আনতুম। তার পরে মনে পড়ে, তখনকার দিনে জর হলে কবিরাজের কঠোর শাসনে তিন দিন কেবল গরম জল আর এলাচদানা আমার পথ্য ছিল—মেজোরানী আমার দুঃখ সইতে পারতেন না, কতদিন লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে খাবার এনে দিয়েছেন ; এক-একদিন ধরা পড়ে র্তাকে ভৎসনা ও সইতে হয়েছে। তার পরে বড়ো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুখদুঃখের রঙ নিবিড় হয়ে উঠেছে—কত ঝগড়াও হয়েছে, বিষয়ব্যাপার নিয়ে মাঝে মাঝে অনেক ঈর্ষা, সন্দেহ এবং বিরোধও এসে পড়েছে, আবার তার মাঝখানে বিমল এসে পড়ে কখনো কখনো এমন হয়েছে যে, মনে হয়েছে বিচ্ছেদ বুঝি আর জুড়বে না—কিন্তু তার পরে প্রমাণ হয়েছে অস্তরের মিল সেই বাইরের ক্ষতের চেয়ে অনেক প্রবল । এমনি করে শিশুকাল থেকে আজ পর্যন্ত একটি সত্য সম্বন্ধ দিনে দিনে অবিচ্ছিন্ন হয়ে জেগে উঠেছে ; সেই সম্বন্ধের শাখাপ্রশাখা এই বৃহৎ বাড়ির সমস্ত ঘরে আঙিনায় বারান্দায় ছাদে বাগানে তার ছায়া ছড়িয়ে দিয়ে সমস্তকে অধিকার করে দাড়িয়েছে । যখন দেখলুম মেজোরানী তার সমস্ত ছোটোখাটো জিনিসপত্র গুছিয়ে বাক্স বোঝাই করে আমাদের বাড়ির থেকে যাবার মুখ করে দাড়িয়েছেন তখন এই চিরসম্বন্ধটির সমস্ত শিকড়গুলি পর্যস্ত আমার হৃদয়ের মধ্যে যেন শিউরে উঠল । আমি বেশ বুঝতে পারলুম কেন মেজোরানী, যিনি ন-বছর বয়স থেকে আর এ-পর্যস্ত কখনো একদিনের জন্যও এ-বাড়ি ছেড়ে বাইরে কাটান নি, তিনি তার সমস্ত অভ্যাসের বাধন কেটে ফেলে অপরিচিতের মধ্যে ভেসে চললেন। অথচ সেই আসল কারণটির কথা মুখ ফুটে বলতেই চান না-অন্ত কতরকমের তুচ্ছ ছুতো তোলেন । এই ভাগ্যকর্তৃক বঞ্চিতা পতিপুত্রহীন নারী সংসারের মধ্যে কেবল এই একটিমাত্র সম্বন্ধকে নিজের হৃদয়ের সমস্ত সঞ্চিত অমৃত দিয়ে পালন করেছেন, তার বেদন যে কত গভীর সে আজ তার এই ঘরময় ছড়াছড়ি বাক্সপুটুলির মধ্যে দাড়িয়ে যত স্পষ্ট করে বুঝলুম এমন আর কোনো দিন বুঝি নি। আমি বুঝেছি টাকাকড়ি-ঘরন্থয়ারের ভাগ নিয়ে ছোটোখাটো সামান্ত সাংসারিক খুটিনাটি নিয়ে বিমলের সঙ্গে আমার সঙ্গে তার যে বারবার ঝগড়া