পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७३२ রবীন্দ্র-রচনাবলী এমন সময় ক্ষেমা মন্ত একটা ঘোমটা টেনে মৃদুস্বরে বললে, দারোগাবাবু কাকে সঙ্গে করে এনেছে, মহারাজের সঙ্গে দেখা করতে চায়। মেজোরানী রাগ করে উঠে বললেন, মহারাজ চোর না ডাকাত যে দারোগী তার সঙ্গে লেগেই রয়েছে। বলে আয় গে, মহারাজ এখন নাইতে গেছেন। আমি বললুম, একবার দেখে আসি গে—হয়তো কোনো জরুরি কাজ আছে। মেজোরানী বললেন, না সে হবে না। ছোটোরানী কাল বিস্তর পিঠে তৈরি করেছে, দারোগাকে সেই পিঠে খেতে পাঠিয়ে তার মেজাজ ঠাণ্ডা করে রাখছি । বলে তিনি আমাকে হাতে ধরে টেনে স্নানের ঘরের মধ্যে ঠেলে দিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিলেন। আমি ভিতর থেকে বললুম, আমার সাফ কাপড় যে এখনো— তিনি বললেন, সে আমি ঠিক করে রাখব, ততক্ষণ তুমি স্নান করে নাও। এই উৎপাতের শাসনকে অমান্য করি এমন সাধ্য আমার নেই–সংসারে এ যে বড়ো দুর্লভ। থাক গে, দারোগাবাবু বসে বসে পিঠে খাক গে। না-হয় হল আমার কাজের অবহেলা । ইতিমধ্যে সেই ডাকাতি নিয়ে দারোগ দু-পাঁচ জনকে ধরা-পাকড়া করছেই । রোজই একটা-ন-একটা নিরীহ লোককে ধরে-বেঁধে এনে আসর গরম করে রেখেছে। আজও বোধ হয় তেমনি কোন এক অভাগাকে পাকড়া করে এনেছে। কিন্তু পিঠে কি একলা দারোগাই খাবে ? সে তো ঠিক নয়। দরজায় দমাদম ঘা লাগfলুম। মেজোরানী বাইরে থেকে বললেন, জল ঢালো, জল ঢালো, মাথা গরম হয়ে উঠেছে বুঝি ? আমি বললুম, পিঠে দুজনের মতো সাজিয়ে পাঠিয়ো—দারোগ যাকে চোর বলে ধরেছে, পিঠে তারই প্রাপ্য—বেহারাকে বলে দিয়ো তার ভাগে যেন বেশি পড়ে । যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি স্নান সেরেই দরজা খুলে বেরিয়ে এলুম। দেখি দরজার বাইরে মাটির উপরে বিমল বসে। এ কি আমার সেই বিমল, সেই তেজে অভিমানে ভরা গরবিনী ? কোন ভিক্ষা মনের মধ্যে নিয়ে এ আমার দরজাতেও বসে থাকে ? আমি একটু থমকে দাড়াতেই সে উঠে মুখ একটু নিচু করে আমাকে বললে, তোমার সঙ্গে আমার একটু কথা আছে। আমি বললুম, তাহলে এস আমাদের ঘরে । কোনো বিশেষ কাজে কি তুমি বাইরে যাচ্ছ ?