পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে Hදි ෘ আসতেই তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ঠাকুরপোর লোহার সিন্দুকের চাবি কোথায় আছে জানিস ? বিমল বললে, আমার কাছে। মেজোরানী বললেন, আমি তো বলেছিলুম। চারিদিকে চুরিডাকাতি হচ্ছে, ছোটোরানী বাইরে দেখাত ওর ভয় নেই কিন্তু ভিতরে ভিতরে সাবধান হতে ছাড়ে নি । বিমলার মুখ দেখে মনে কেমন একটা খটকা লাগল—বললুম, আচ্ছ, চাবি এখন তোমার কাছেই থাক, বিকেলে টাকাটা বের করে নেব । , মেজোরানী বলে উঠলেন, আৰার বিকেলে কেন ঠাকুরপো, এইবেল ওটা বের করে নিয়ে খাজাঞ্চির কাছে পাঠিয়ে দাও । বিমল বললে, টাকাটা আমি বের করে নিয়েছি । চমকে উঠলুম। মেজোরানী জিজ্ঞাসা করলেন, বের করে নিয়ে রাখলি কোথায় ? বিমল বললে, খরচ করে ফেলেছি । মেজোরানী বললেন, ওমা, শোনো একবার ! এত টাকা খরচ করলি কিসে ? বিমল তার কোনো উত্তর করলে না । আমিও তাকে কোনো কথা জিজ্ঞাসা করলুম না—দরজা ধরে চুপ করে দাড়িয়ে রইলুম। মেজোরানী বিমলকে কী একটা বলতে যাচ্ছিলেন, থেমে গেলেন ; আমার মুখের দিকে চেয়ে বললেন, বেশ করেছে নিয়েছে। আমার স্বামীর পকেটে বাক্সে যা-কিছু টাকা থাকত সব আমি চুরি করে লুকিয়ে রাখতুম, জানতুম সে-টাকা পাচভূতে লুটে খাবে। ঠাকুরপো, তোমারও প্রায় সেই দশা—কত খেয়ালেই যে টাকা ওড়াতে জান । তোমাদের টাকা যদি আমরা চুরি করি তবেই সে-টাকা রক্ষা পাৰে । এখন চলো, একটু শোবে চলো। মেজোরানী আমাকে শোবার ঘরে ধরে নিয়ে গেলেন, আমি কোথায় চলেছি আমার মনেও ছিল না। তিনি আমার বিছানার পাশে বসে প্রফুল্লমুখে বললেন, ওলো ও ছুটু, একটা পান দে তো ভাই। তোরা ষে একেবারে বিবি হয়ে উঠলি । পান নেই ঘরে ? না হয় আমার ঘর থেকেই আনিয়ে দে না । আমি বললুম, মেজোরানী, তোমার তো এখনো খাওয়া হয় নি। তিনি বললেন, কোন কালে । এটা একেবারে মিথ্যে কথা । তিনি আমার পাশে বসে যা-তা ৰকতে লাগলেন, কত রাজ্যের কত বাজে কথা। দাসী এসে দরজার বাইরে থেকে খবর দিলে বিমলের