পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૭8ર রবীন্দ্র-রচনাবলী মাহুষের চরিত্রও এমন একটি স্বাক্ট, যাহা জড়স্বষ্টির স্যায় আমাদের ইতিয়ের দ্বারা আয়ত্তগমছড়ীহে। তাহাকে দাড়াইতে বলিলে দাড়ায় না। তাহা মানুষের পক্ষে পরম ঔংস্থক্যজনক, কিন্তু তাহাকে পশুশালার পশুর মতে বাধিয়া খাচার মধ্যে পুরিয়া ঠাহর করিয়া দেখিবার সহজ উপায় নাই। এই ধরাবাধার অতীত বিচিত্র মানবচরিত্র—সাহিত্য ইহাকেও অস্তরলোক হইতে বাহিরে প্রতিষ্ঠিত করিতে চায়। অত্যন্ত দুরূহ কাজ। কারণ, মানবচরিত্র স্থির নহে, স্বসংগত নহে—তাহার অনেক অংশ, অনেক স্তর—তাহার সদর-আন্দরে অবারিত গতিবিধি সহজ নয়। তা ছাড়া, তাহার লীলা এত স্বল্প, এত অভাবনীয়, এত আকস্মিক যে, তাহাকে পূর্ণ আকারে আমাদের হৃদয়গম্য করা অসাধারণ ক্ষমতার কাজ। ব্যাস-বাল্মীকি-কালিদাসগণ এই কাজ করিয়া আসিয়াছেন। এইবার আমাদের সমস্ত আলোচ্য বিষয়কে এক কথায় বলিতে গেলে এই বলিতে হয়, সাহিত্যের বিষয় মানবহৃদয় এবং মানবচরিত্র। কিন্তু মানবচরিত্র, এটুকুও যেন বাহুল্য বলা হইল। বস্তুত বহিঃপ্রকৃতি এবং মানবচরিত্র মানুষের হৃদয়ের মধ্যে অতুক্ষণ যে-আকার ধারণ করিতেছে, যে-সংগীত ধ্বনিত করিয়া তুলিতেছে, ভাষারচিত সেই চিত্র এবং সেই গানই সাহিত্য । ভগবানের আনন্দ প্রকৃতির মধ্যে মানবচরিত্রের মধ্যে আপনাকে আপনি স্বষ্টি করিতেছে। মাহুষের হৃদয়ও সাহিত্যে আপনাকে স্বজন করিবার ব্যক্ত করিবার চেষ্টা করিতেছে । এই চেষ্টার অস্ত নাই, ইহা বিচিত্র । কবিগণ মানবহৃদয়ের এই চিরস্তন চেষ্টার উপলক্ষ্যমাত্র । ভগবানের আনন্দস্বষ্টি আপনার মধ্য হইতে আপনি উৎসারিত—মানবহৃদয়ের আনন্দহষ্টি তাহারই প্রতিধ্বনি । এই জগংস্থষ্টির আনন্দগীতের ঝংকার আমাদের হৃদয়ৰীণাতন্ত্রীকে অহরহ স্পন্দিত করিতেছে—সেই যে মানসসংগীত, ভগবানের স্বাক্টর প্রতিঘাতে আমাদের অস্তরের মধ্যে সেই যে স্থষ্টির আবেগ, সাহিত্য তাহারই বিকাশ। বিশ্বের নিশ্বাস আমাদের চিত্তৰংশীর মধ্যে কী রাগিণী বাজাইতেছে, সাহিত্য তাহাই স্পষ্ট করিয়া প্রকাশ করিবার চেষ্টা করিতেছে। সাহিত্য ব্যক্তিবিশেষের নহে, তাহা রচয়িতার নহে—তাহা দৈববাণী । বহিঃস্থষ্টি যেমন তাহার ভালোমন্দ তাহার অসম্পূর্ণতা লইয়া চিরদিন ব্যক্ত হইবার চেষ্টা করিতেছে—এই বাণীও তেমনি দেশে দেশে, ভাষায় ভাষায় আমাদের আস্তর হইতে বাহির হইবার জন্য নিয়ত চেষ্টা করিতেছে । '\రిe