পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ծ8Ե- রবীন্দ্র-রচনাবলী শুভ্ৰনিরঞ্জন । মাধ্যাকৰ্ষণতত্ব আমার কাছে একরূপ, অন্তের কাছে অন্তরূপ নহে । তাহার উপরে বিচিত্র হৃদয়ের নূতন নূতন রঙের ছায়া পড়িবার জো নাই। যে-সকল জিনিস অন্তের হৃদয়ে সঞ্চারিত হইবার জন্ত প্রতিভাশালী হৃদয়ের কাছে স্থর, রং, ইঙ্গিত প্রার্থনা করে, যাহা আমাদের হৃদয়ের দ্বারা স্বই না হইয়া উঠিলে অন্ত হৃদয়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠালাভ করিতে পারে না, তাহাই সাহিত্যের সামগ্ৰী । তাহা আকারে-প্রকারে, ভাবে-ভাষীয়, স্বরে-ছন্দে মিলিয়। তবেই বাচিতে পারে—তাহা মানুষের একান্ত আপনার—তাহা আবিষ্কার নহে, অমুকরণ নহে, তাহ স্বষ্টি । স্বতরাং তাহা একবার প্রকাশিত হইয়া উঠিলে তাহার রূপান্তর অবস্থাস্তর করা চলে না— তাহার প্রত্যেক অংশের উপরে তাহার সমগ্রতা একাস্তভাবে নির্ভর করে । যেখানে তাহার ব্যত্যয় দেখা যায়, সেখানে সাহিত্য-অংশে তাহ হেয় । У О У о K সাহিত্যের বিচারক ঘরে বসিয়া আনন্দে যখন হাসি এবং দুঃখে যখন কাদি, তখন এ-কথা কখনো মনে উদয় হয় না যে, আরও একটু বেশি করিয়া হাসা দরকার বা কান্নাট ওজনে কম পড়িয়াছে। কিন্তু পরের কাছে যখন আনন্দ বা দুঃখ দেখানে আবিস্তক হইয়া পড়ে, তখন মনের ভাবটা সত্য হইলেও বাহিরের প্রকাশটা সম্পূর্ণ তাহার অনুযায়ী না হইতে পারে । এমন কি, মা-ও যখন সশস্ত্ৰ বিলাপে পল্লীর নিদ্ৰাতজা দূর করিয়া দেয়, তখন সে যে শুদ্ধমাত্র পুত্ৰশোক প্রকাশ করে তাহা নয়, পুত্ৰশোকের গৌরব প্রকাশ করিতেও চায়। নিজের কাছে দুঃখমুখ প্রমাণ করিবার প্রয়োজন হয় না—পরের কাছে তাহা প্রমাণ করিতে হয়। সুতরাং শোকপ্রকাশের জন্য যেটুকু কান্ন স্বাভাবিক, শোকপ্রমাণের জন্ত তাহার চেয়ে স্বর চড়াইয়া না দিলে চলে না । ইহাকে কৃত্রিমতা বলিয়া উড়াইয়া দিলে অস্কায় হইবে । শোকপ্রমাণ শোক-- প্রকাশের একটা স্বাভাবিক অঙ্গ। আমার ছেলের মূল্য ষে কেবল আমারই কাছে বেশি, তাহার বিচ্ছেদ যে কতখানি মর্মাস্তিক ব্যাপার তাহ পৃথিবীর আর কেহই যে বুঝিবে না, তাহার অভাবসত্ত্বেও পৃথিবীর আর-সকলেই যে অভ্যস্ত স্বচ্ছন্দচিত্তে আহারনিদ্রা ও আপিস-ঘাতায়াতে প্রবৃত্ত থাকিবে, শোকাতুর মাতাকে তাহার পুত্রের প্রতি