পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য eురి সভ্যলোকের মন সেটুকু ক্ষেত্রের মধ্যে নাই । ভিতরে ও বাহিরে, দেশে ও কালে সভ্যজাতির জগৎটাই যে বড়ো এবং তাহার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অত্যন্ত বিচিত্র । এইজষ্ঠই বর্বরের জগতে ও সভ্যের জগতে বস্তুর মাপ এবং ওজন এক হইতেই পারে না । ছবিসম্বন্ধে যে-ব্যক্তি আনাড়ি, সে একটা পটের উপরে খুব খানিকটা রংচং বা গোলগাল আকৃতি দেখিলেই খুশি হইয় ওঠে। ছবিকে সে বড়ো ক্ষেত্রে রাখিয়া দেখিতেছে না। এখানে তাহার ইঞ্জিয়ের রাশ টানিয়া ধরিবে, এমন কোনো উচ্চতর বিচারবুদ্ধি নাই। গোড়াতেই যাহা তাহাকে আহবান করে, তাহারই কাছে মে আপনাকে ধরা দিয়া বসে। রাজবাড়ির দেউড়ির দরোয়ানজির চাপরাস ও চাপদাড়ি দেখিয় তাহাকেই সর্বপ্রধান ব্যক্তি মনে করিয়া সে অভিভূত হইয়া পড়ে, দেউড়ি পার হইয়া সভায় যাইবার কোনো প্রয়োজন সে অনুভব করিতেই পারে না । কিন্তু যে-লোক এতবড়ো গ্রাম্য নহে, সে এত সহজে ভোলে না। সে জানে, দরোয়নের মহিমাটা হঠাৎ খুব বেশি করিয়া চোখে পড়ে বটে, কারণ চোখে পড়ার বেশি মহিমা যে তাহার নাই । রাজার মহিমা কেবলমাত্র চোখে পড়িবার বিষয় নহে, তাহাকে মন দিয়াও দেখিতে হয়। এইজন্ত রাজার মহিমার মধ্যে একটা শক্তি, শাস্তি ও গাম্ভীর্ষ আছে । # অতএব ষে-ব্যক্তি সমজদার, ছবিতে সে একটা রংচঙের ঘট। দেখিলেই অভিভূত হইয় পড়ে না । সে মুখ্যের সঙ্গে গোঁণের, মাঝখানের সঙ্গে চারিপাশের, সম্মুখের সঙ্গে পিছনের একটা সামঞ্জস্ত খুজিতে থাকে। রংচঙে চোখ ধরা পড়ে, কিন্তু সামঞ্জস্তের স্বষম! দেখিতে মনের প্রয়োজন। তাহাকে গভীরভাবে দেখিতে হয়, এইজন্ত তাহার আনন্দ গভীরতর । এই কারণে অনেক গুণী দেখা যায়, বাহিরের ক্ষুদ্র লালিত্যকে র্যাহারা আমল দিতে চান না ;. তাহাদের স্থষ্টির মধ্যে যেন একটা কঠোরতা আছে । তাহাদের ধ্রুপদের মধ্যে খেয়ালের তান নাই। হঠাৎ তাহার বাহিরের রিক্ততা দেখিয়া ইতর লোকে তাহাকে পরিত্যাগ করিয়া যাইতে চাহে ; অথচ সেই নির্মল রিক্ততার গভীরতর ঐশ্বর্যই বিশিষ্টলোকের চিত্তকে বৃহৎ আনন্দ দান করে। তবেই দেখা যাইতেছে, শুধু চোখের দৃষ্টি নহে, তাহার পিছনে মনের দৃষ্টি যোগ না দিলে সৌন্দর্ধকে বড়ো করিয়া দেখা যায় না। এই মনের দৃষ্টি লাভ করা বিশেষ শিক্ষার কর্ম । মনেরও আবার অনেক স্তর আছে। কেবল বুদ্ধিবিচার দিয়া আমরা যতটুকু দেখিতে পাই, তাহার সঙ্গে হৃদয়ভাৰ যোগ দিলে ক্ষেত্র আরও বাড়িয়া যায়—ধৰ্মবুদ্ধি