পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లిన8 রবীন্দ্র-রচনাবলী যেমন সমস্তই প্রাণে কঁাপিতেছে, তেমনি সমস্তই আনন্দ, উপনিষদ এ-কথাও বলিয়াছেন । জগতের এই নিরবচ্ছিন্ন আনন্দরূপ দেখিবার পথে স্বন্দর-অস্বন্দরের ভেদটা প্রথমে একান্ত হইয়া মাথা তোলে। নহিলে সুন্দরের পরিচয় ঘটা একেবারে অসম্ভব । , আমাদের সৌন্দর্যবোধের প্রথমাবস্থায় সৌনর্ষের একান্ত স্বাতন্ত্র্য আমাদিগকে যেন ঘা মারিয়া জাগাইতে চায়। এই জন্ত বৈপরীত্য তাহার প্রথম অস্ত্র। খুব একটা টকটকে রং, খুব একটা গঠনের বৈচিত্র্য নিজের চারিদিকের স্নানতা হইতে যেন ফুড়িয়া উঠিয়া আমাদিগকে হাক দিয়া ডাকে। সংগীত কেবল উচ্চশব্দের উত্তেজনা আশ্রয় করিয়া আকাশ মাত করিবার চেষ্টা করিতে থাকে। অবশেষে সৌন্দর্যবোধ যতই বিকাশ পায়, ততই স্বাতন্ত্র্য নহে সুসংগতি, আঘাত নহে আকর্ষণ, আধিপত্য নহে সামঞ্জস্ত আমাদিগকে আনন্দ দান করে। এইরূপে সৌন্দর্ধকে প্রথমে চারিদিক হইতে স্বতন্ত্র করিয়া লইয়া সৌন্দর্যকে চিনিবার চর্চা করি, তাহার পরে সৌনর্ধকে চারিদিকের সঙ্গে মিলাইয়। লইয়া চারিদিককেই স্বন্দর বলিয়া চিনিতে পারি। একটুখানির মধ্যে দেখিলে আমরা অনিয়ম দেখি, চারিদিকের সঙ্গে অখণ্ড করিয়া মিলাইয়া দেখিলেই নিয়ম আমাদের কাছে ধরা পড়ে ; তখন, যদিচ ধোয়া আকাশে উড়িয়া যায় ও চেলা মাটিতে পড়ে, সোলা জলে ভাসে ও লোহা জলে ডোবে, তবু এই সমস্ত দৈত্যের মধ্যে ভারাকর্ষণের এক নিয়মের কোথাও বিচ্ছেদ দেখি না । জ্ঞানকে ভ্ৰমমুক্ত করিবার এই যেমন উপায়, তেমনি আনন্দকেও বিশুদ্ধ করিতে হইলে তাহাকে খণ্ডতা হইতে ছুটি দিয়া সমগ্রের সহিত যুক্ত করিতে হইবে। যেমন উপস্থিত যাহাই প্রতীতি হয়, তাহাকেই সত্য বলিয়া ধরিয়া লইলে বিজ্ঞানে বাধে, তেমনি উপস্থিত যাহাই আমাদিগকে মুখ করে, তাহাকেই সুন্দর বলিয়া ধরিয়া লইলে আনন্দের বিঘ্ন ঘটে। আমাদের প্রতীতিকে নানাদিক দিয়া সর্বত্র যাচাই করিয়া লইলে তবেই তাহার সত্যতা স্থির হয়—তেমনি আমাদের অনুভূতিকেও তখনই আনন্দ বলিতে পারি, যখন সংসারের সকল দিকেই সে মিশ খায়। মাতাল মদ খাইয়া যতই মুখবোধ করুক, নানা দিকেই সে-স্বখের বিরোধ ;—তাহার আপনার স্বথ, অন্তের দুঃখ, তাহার আজিকার স্থখ, কালিকার ছুঃখ, তাহার প্রকৃতির এক অংশের মুখ, প্রকৃতির অন্ত অংশের দুঃখ । অতএব এ-মুখে সৌন্দর্ধ নষ্ট হয়, জানন্দ ভঙ্গ হয়। প্রকৃতির সমস্ত সত্যের সঙ্গে ইহার মিল হয় না। 疇曾