পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

838 রবীন্দ্র-রচনাবলী ভিতরে ভিতরে স্বর মিলাইয়া দিল, একি কোনো ব্যক্তিবিশেষের খেয়ালে হইল । দেশ জুড়িয়া ইহার আয়োজন চলিয়াছে,—দুর্বলের অভিমানবশত ইহাকে আমরা স্বীকার করিব না বলিয়াও পদে পদে স্বীকার করিতে বাধ্য হইতেছি,—তাই রামায়ণের গান করিতে গিয়াও ইহার মুর আমরাও ঠেকাইতে পারি নাই । রামায়ণকে অবলম্বন করিয়া আমি এই কথাটা দেখাইবার চেষ্টা করিয়াছি, মানুষের সাহিত্যে যে একটা ভাবের স্বাক্ট চলিতেছে, তাহার স্থিতিগতির ক্ষেত্র অতি বৃহৎ । তাহা দেখিতে আকস্মিক ; এই চৈত্রমাসে যে ঘনঘন এত বৃষ্টি হইয়া গেল, সে-ও তো আকস্মিক বলিয়া মনে হয়। কিন্তু কত হুদুর পশ্চিম হইতে কারণপরম্পরার দ্বারা বাহিত হইয়া কোথাও বা বিশেষ স্থযোগ কোথাও বা বিশেষ বাধা পাইয়া সেই বৃষ্টি আমার ক্ষেত্রকে অভিষিক্ত করিয়া দিল। ভাবের প্রবাহও তেমনি করিয়াই বহিয়া চলিয়াছে ; সে ছোটোবড়ো কত কারণের দ্বারা খণ্ড হইতে এক এবং এক হইতে শতধা হইয়া কত রূপরূপাস্তরে ছড়াইয়া পড়িতেছে। সম্মিলিত মানবের বৃহৎ মন, মনের নিগূঢ় এবং অমোঘ নিয়মেই আপনাকে কেবলই প্রকাশ করিয়া অপরূপ মানসস্থষ্টি সমস্ত পৃথিবীতে বিস্তার করিতেছে । তাহার কত রূপ, কত রস, কতই বিচিত্র গতি । লেখককে যখন আমরা অত্যস্ত নিকটে প্রত্যক্ষ করিয়া দেখি, তখন লেখকের সঙ্গে লেখার সম্বন্ধটুকুই আমাদের কাছে প্রবল হইয় উঠে—তখন মনে করি, গঙ্গোত্রীই যেন গঙ্গাকে স্বষ্টি করিতেছে । এইজন্ত জগতের যে-সকল কাব্যের লেখক কে তাহার যেন ঠিকানা নাই, যে-সকল কাব্য আপনাকেই যেন আপনি স্বষ্টি করিয়া চলিয়াছে অথচ যাহার স্বত্র ছিন্ন হইয়া যায় নাই, সেই সকল কাব্যের দৃষ্টাস্ত দিয়া আমি ভাৰস্থষ্টির বিপুল নৈসর্গিকতার প্রতি আপনাদের মন আকর্ষণ করিবার চেষ্টা করিয়াছি । > ●>8