পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য 8Հ) ছিল না, তাহার উৎসাহদাতা শিক্ষিতসাধারণ ছিল না। যাহারা ইংরেজি চর্চা করিতেন তাহারা বাংলাকে উপেক্ষা করিতেন এবং র্যাহারা বাংলা জানিতেন তাহারাও এই নুতন উস্তমের কোনো মর্যাদা বুঝিতেন না । , তখন বঙ্গসাহিত্যের প্রতিষ্ঠাতাদের সম্মুখে কেবল স্বদূর ভবিষ্যৎ এবং স্ববৃহৎ জনমণ্ডলী উপস্থিত ছিল—তাহাই যথার্থ সাহিত্যের স্থায়ী প্রতিষ্ঠাভূমি ; স্বার্থও নহে খ্যাতিও নহে, প্রকৃত সাহিত্যের ধ্রুব লক্ষ্যস্থল কেবল নিরবধি কাল এবং বিপুল৷ পৃথিবী। সেই লক্ষ্য থাকে বলিয়াই সাহিত্য মানবের সহিত মানবকে, যুগের সহিত যুগান্তরকে প্রাণবন্ধনে বাধিয়া দেয়। বঙ্গসাহিত্যের উন্নতি ও ব্যাপ্তি সহকারে কেবল যে সমস্ত বাঙালির হৃদয় অস্তরতম যোগে বদ্ধ হইবে তাহা নহে,—এক সময় ভারতবর্ষের অন্যান্ত জাতিকেও বঙ্গসাহিত্য আপন জ্ঞানাল্পবিতরণের অতিথিশালায়, আপন ভাবামৃতের অবারিত সদাত্ৰতে আকর্ষণ করিয়া আনিবে তাহার লক্ষণ এখন হইতেই অল্পে অল্পে পরিস্ফুট इझेब्रा উঠিতেছে । এ-পর্যন্ত বঙ্গসাহিত্যের উন্নতির জন্য র্যাহারা চেষ্টা করিয়াছেন তাহারা একক ভাবেই কাজ করিয়াছেন। এককভাবে সকল কাজই কঠিন, বিশেষত সাহিত্যের কাজ। কারণ, পূর্বেই বলিয়াছি সাহিত্যের একটি প্রধান উপাদান সহিতত্ব। ষেসমাজে জনসাধারণের মনের মধ্যে অনেকগুলি ভাব সঞ্চিত এবং সর্বদা আন্দোলিত হইতেছে, যেখানে পরম্পরের মানসিক সংস্পর্শ নানা আকারে পরস্পর অনুভব করিতে পারিতেছে,—সেখানে সেই মনের সংঘাতে ভাব এবং ভাবের সংঘাতে সাহিত্য স্বতই জন্মগ্রহণ করে এবং চতুর্দিকে সঞ্চারিত হইতে থাকে । এই মানবমনের সজীব সংশ্ৰব হইতে বঞ্চিত হইয়া কেবলমাত্র দৃঢ় সংকল্পের আঘাতে সবিহীন মনকে জনশূন্ত কঠিন কর্তব্যক্ষেত্রের মধ্য দিয়া চালনা করা, একলা বসিয়া চিন্তা করা, উদাসীনদের মনোযোগ আকর্ষণ করিবার একান্ত চেষ্টা করা, সুদীর্ঘকাল একমাত্র নিজের অকুরাগের উত্তাপে নিজের ভাবপুষ্পগুলিকে প্রস্ফুটিত করিয়া তুলিবার প্রয়াস করা এবং চিরজীবনের প্রাণপণ উস্তমের সফলতা সম্বন্ধে চিরকাল সন্দিহান হইয়া থাকা—এমন নিরানন্দের অবস্থা আর কী আছে ? যে-ব্যক্তি কাজ করিতেছে কেবল যে তাহারই কষ্ট তাহা নয়, ইহাতে কাজেরও অসম্পূর্ণতা ঘটে। এইরূপ উপবাসদশায় সাহিত্যের ফুলগুলিতে সম্পূর্ণ রং ধরে না, তাহার ফলগুলিতে পরিপূর্ণমাত্রায় পাক ধরিতে পায় না। সাহিত্যের সমস্ত আলোক ও উত্তাপ সর্বত্র সর্বতোভাবে সঞ্চারিত হইতে পারে না। বৈজ্ঞানিকেরা বলেন, পৃথিবীবেষ্টনকারী ৰায়ুমণ্ডলের একটি প্রধান কাজ, স্বর্যালোককে ভাণ্ডিয়া বণ্টন করিয়া চারিদিকে যথাসম্ভব সমানভাবে বিকীর্ণ করিয়া