পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য 8Տծ করিয়া যেদিকে ফিরানো যায় তাহাদের কম্পাসের কাটা ইংরেজির দিকেই ঘুরিয়া বসে । তাহারা অনেকে ইংরেজি আহার এবং পরিচ্ছদকে বিজাতীয় বলিয়া ঘৃণা করেন ;– তাহারা আমাদের জাতির বাহশরীরকে বিলাতি অশনবসনের সহিত সংসত্ত দেখিতে চাহেন না ;–কিন্তু সমস্ত জাতির মনঃশরীরকে বিদেশীয় ভাষার পরিচ্ছদে মণ্ডিত এবং বিজাতীয় সাহিত্যের আহার্ধে পরিবর্ধিত দেখিতে র্তাহাদের আক্ষেপ বোধ হয় না। শরীরের সহিত বস্ত্র তেমন করিয়া সংলিপ্ত হয় না, মনের সহিত ভাষা যেমন করিয়া জড়িত হইয়া যায়। র্যাহার। আপন সস্তানকে তাহার মাতৃভাষা শিখিবার অবসর দেন না, যাহারা পরমাত্মীয়দিগকেও ইংরেজি ভাষায় পত্র লিখিতে লজ্জা বোধ করেন না, যাহারা “পদ্মবনে মত্তকরীসম” বাংলা ভাষার বানান এবং ব্যাকরণ ক্রীড়াচ্ছলে পদদলিত করিতে পারেন অথচ ভ্রমক্রমে ইংরেজির ফোটা অথবা মাত্রার বিচু্যতি ঘটিলে ধরণীকে দ্বিধা হইতে বলেন, যাহাদিগকে বাংলায় হস্তিমূর্খ বলিলে অবিচলিত থাকেন কিন্তু ইংরেজিতে ইগ্লোরেন্ট বলিলে মূৰ্ছাপ্রাপ্ত হন, তাহাদিগকে এ-কথা বুঝানো কঠিন যে, তাহাবা ইংরেজি শিক্ষার সন্তোষজনক পরিণাম নহেন। কিন্তু ইংরেজি-অভিমানী, মাতৃভাষাম্বেষী বাঙালির ছেলেকে জামরা দোষ দিতে চাহি না । ইংরেজির প্রতি এই উৎকট পক্ষপাত স্বাভাবিক। কারণ, ইংরেজি ভাষাটা একে রাজার ঘরের মেয়ে, তাহাতে আবার তিনি আমাদের দ্বিতীয় পক্ষের সংসার—তাহার আদর যে অত্যন্ত বেশি হইবে তাহাতে বিচিত্র নাই । তাহার যেমন রূপ তেমনি ঐশ্বৰ্ষ—আবার তাহার সম্পর্কে আমাদের রাজপুত্রদের ঘরেও আমরা কিঞ্চিৎ সম্মানের প্রত্যাশা রাখি। সকলেই অবগত আছেন ইহার প্রসাদে উক্ত যুবরাজদের প্রাসাদদ্বারপ্রান্তে আমরা কখনো কখনো স্থান পাইয়া থাকি ; আবার কখনো কখনো কর্ণপীড়নও লাভ হয়—সেটাকে আমরা পরিহাসের স্বরূপ উড়াইয়া দিবার চেষ্টা করি কিন্তু চক্ষু দিয়া অশ্রধারা বিগলিত হইয়া পড়ে। আর আমাদের হতভাগিনী প্রথম পক্ষটি—আমাদের দরিদ্র বাংলা ভাষা—পাকশালার কাজ করেন—সে-কাজটি নিতান্ত সামান্ত নহে, তেমন আবশ্যক কাজ আর আমাদের আছে কি না সন্দেহ, কিন্তু তাহাকে আমাদের আপনার বলিয়া পরিচয় দিতে লজ্জা করে। পাছে তাহার মলিন বসন লইয়া তিনি আমাদের ধনশালী নবকুটুম্বদের চক্ষে পড়েন এইজন্ত র্তাহাকে গোপন করিয়া রাখি ;–প্রশ্ন করিলে বলি, চিনি না। “ਅਂ সে দরিদ্র ঘরের মেয়ে। তাহার বাপের রাজত্ব নাই। সে সম্মান দিতে পারে না, সে কেবলমাত্র ভালোবাসা দিতে পারে। তাহাকে ষে ভালোবাসে তাহার পদবৃদ্ধি