পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Web” রবীন্দ্র-রচনাবলী মিউজিয়ম বললেই হয় । মতসকল জীবিত অবস্থায় যেখানে নানা ভঙ্গিতে সঞ্চরণ করে সেখানে পাঠকদের প্রবেশলাত দুর্লভ। অবশু, সেখানে কেবল গতি, নৃত্য এবং আভাস দেখা যায় মাত্র, জিনিসটাকে সম্পূর্ণ হাতে তুলে নিয়ে নাড়াচাড়া করা যায় না, কিন্তু তাতে যে একরকমের জ্ঞান এবং সুখ পাওয়া যায় এমন অন্ত কিছুতে পাবার সুবিধা নেই । २ তুমি আমাকে খানিকটা ভুল বুঝেছ সন্দেহ নেই। আমিও বোধ করি কিঞ্চিৎ চিলে রকমে ভাব প্রকাশ করেছিলুম—কিন্তু সেজন্তে আমার কোনো দুঃখ নেই। কারণ, ভুল না বুঝলে অনেক সময় এক কথায় সমস্ত শেষ হয়ে যায়, অনেক কথা বলবার অবসর পাওয়া যায় না। খাবার জিনিস মুখে দেবামাত্র মিলিয়ে গেলে যেমন তার সম্পূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করা যায় না, তেমনি ভুল না বুঝলে, শোনবামাত্র অবাধে মতের ঐক্য হলে, কথাটা একদমে উদরস্থ হয়ে যায়—রয়ে বসে তার সমস্তটার পুরো আস্বাদ পাওয়া যায় না । তুমি আমাকে ভুল বুঝেছ সে যে তোমার দোষ তা আমি বলতে চাই নে । আপনার ঠিক মতটি নিভুল করে ব্যক্ত করা ভারি শক্ত। এক মানুষের মধ্যে যেন দুটো মনুষ্য আছে, ভাবুক এবং লেখক । যে-লোকটা ভাবে, সেই লোকটাই যে সব সময় লেখে তা ঠিক মনে হয় না। লেখক-মহন্যটি ভাবুক-মচুন্যটির প্রাইভেট সেক্রেটারি। তিনি অনেক সময় অনবধানতা কিংবা অক্ষমতা বশত ভাবুকের ঠিক ভাবটি প্রকাশ করেন না । আমি মনে করছি, আমার যেটি বক্তব্য আমি সেটি ঠিক লিখে যাচ্ছি, এবং সকলের কাছেই সেটা পরিষ্কার ভাবে ফুটে উঠছে, কিন্তু আমার লেখনী যে কখন পাশের রাস্তায় চলে গেছেন আমি হয়তো তা জানতেও পারি নি। কিন্তু তার ভুলের জন্তে আমিই দায়ী ; তার উপরে দোষারোপ করে আমি নিষ্কৃতি পেতে পারি নে। এইজন্তে অনেক সময়ে দায়ে পড়ে তার পক্ষ সমর্থন করতে হয়। যেটা ঠিক আমার মত নয় সেইটেকেই আমার মত বলে ধরে নিয়ে প্রাণপণে লড়াই করে যেতে হয়। কারণ আমার নিজের মধ্যে যে একটা গৃহবিচ্ছেদ আছে সেটা বাইরের লোকের কাছে প্রকাশ করতে ইচ্ছে করে না। সাহিত্য যে কেবল লেখকের আত্মপ্রকাশ, আমার চিঠিতে যদি এই কথা বেরিয়ে গিয়ে থাকে তাহলে অগত্যা যতক্ষণ পারা যায় তার হয়ে লড়তে হবে, এবং সে-কথাটার মধ্যে যতটুকু সত্য আছে তা সমস্তটা আদায় করে নিয়ে তার পরে তাকে ইক্ষুর চর্বিত