পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ፃbሥ রবীন্দ্র-রচনাবলী মাচুষের সম্বন্ধে কাটাছেড়া তত্ত্ব চাই নে, মূল মানুষটিকেই চাই। তার হাসি চাই, তার কান্ন। চাই, তার অনুরাগ-বিরাগ আমাদের হৃদয়ের পক্ষে রৌদ্রবৃষ্টির মতো । কিন্তু, এই হাসিকান্ন। অনুরাগ-বিরাগ কোথা থেকে উঠছে ? ফলস্টাফ ও ডগবেরি থেকে আরম্ভ ক’রে লিয়র ও হামলেট পর্যন্ত শেকম্পীয়র যে-মানবলোক স্বষ্টি করেছেন, সেখানে মহন্তত্বের চিরস্থায়ী হাসি-অশ্রীর গভীর উৎসগুলি কারও অগোচর নেই। একটা সোসাইটি নভেলের প্রাত্যহিক কথাবার্তা এবং খুচরো হাসিকান্নার চেয়ে আমরা শেকস্পীয়রের মধ্যে বেশি সত্য অনুভব করি। যদিচ সোসাইটি নভেলে যা বর্ণিত হয়েছে তা আমাদের প্রতিদিনের জীবনের অবিকল অনুরূপ চিত্র। কিন্তু আমরা জানি আজকের সোসাইটি নভেল কাল মিথ্যা হয়ে যাবে শেকস্পীয়র কখনো মিথ্যা হবে না । অতএব একটা সোসাইটি নভেল যতই চিত্রবিচিত্র করে রচিত হ’ক, তার ভাষা এবং রচনাকৌশল যতই সর্বাঙ্গসম্পূর্ণ হ’ক, শেকস্পীয়রের একটা নিকৃষ্ট নাটকের সঙ্গে তার তুলনা হয় না। সোসাইটি নভেলে বর্ণিত প্রাত্যহিক সংসারের যথাযথ বর্ণনার অপেক্ষ শেকস্পীয়রে বর্ণিত প্রতিদিনছুলভ প্রবল হৃদয়াবেগের বর্ণনাকে আমরা কেন বেশি সত্য মনে করি সেইটে স্থির হলে সাহিত্যের সত্য কাকে বলা যায় পরিষ্কার বোঝা যাবে । শেকস্পীয়রে আমরা চিরকালের মানুষ এবং আসল মানুষটিকে পাই, কেবল মুখের মানুষটি নয়। মানুষকে একেবারে তার শেষ পর্যন্ত আলোড়িত করে শেকস্পীয়র তার সমস্ত মমুন্যত্বকে অবারিত করে দিয়েছেন । তার অশ্রুঞ্জল চোখের প্রান্তে ঈষৎ বিগলিত হয়ে রুমালের প্রাস্তে শুষ্ক হচ্ছে না, তার হাসি ওষ্ঠাধরকে ঈষৎ উদ্ভিন্ন করে কেবল মুক্তাদস্তগুলিকে মাত্র বিকাশ করছে না—কিন্তু বিদীর্ণ প্রকৃতির নিবারের মতো অবাধে ঝরে আসছে, উচ্ছ্বসিত প্রকৃতির ক্রীড়াশীল উৎসের মতো প্রমোদে ফেটে পড়ছে। তার মধ্যে একটা উচ্চ দর্শনশিখর আছে যেখান থেকে মানবপ্রকৃতির সর্বাপেক্ষা ব্যাপক দৃশু দৃষ্টিগোচর হয়। গোটিয়ের গ্রন্থ সম্বন্ধে আমি যা বলেছিলুম সে হচ্ছে ঠিক এর বিপরীত । গোটিয়ে যেখানে তার রচনার মূল পত্তন করেছেন সেখান থেকে আমরা জগতের চিরস্থায়ী সত্য দেখতে পাই নে। যে-গৌন্দর্য মানুষের ভালোবাসার মধ্যে চিরকাল বদ্ধমূল, যার শ্ৰান্তি নেই, তৃপ্তি নেই, যে-সৌন্দর্য ভালোবাসার লোকের মুখ থেকে প্রতিফলিত হয়ে জগতের অনন্ত গোপন সৌন্দর্ধকে অবারিত করে দেয়, মানুষ চিরকাল ষে-সৌন্দর্ষের কোলে মানুষ হয়ে উঠছে, তার মধ্যে আমাদের স্থাপন না করে তিনি আমাদের একটা ক্ষণিক মায়ামরীচিকার মধ্যে নিয়ে গেছেন ; সে-মরীচিক যতই সম্পূর্ণ ও স্বনিপুণ