পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য 8分● বড়ো নামধারী মুরুবি থাকেন, আহুষ্ঠানপত্রের সৰ্ব্বোচ্চে তাহাদের নামটা ছাপা থাকে, কিন্তু কোনো কাজেই তাছারা লাগিবেন বলিয়া কেহ আশাও করে না, তেমনি কোনো অনুষ্ঠানের গোড়ায় উদ্দেশু বলিয়া মস্ত বড়ো কোনো একটা কথা সকলের উপরে আমরা লিখিয়া রাখি, মনে মনে জানা থাকে ওটা ওইখানে আমনি লেখাই রহিল। প্রতিস্থাপনের উদ্দেশ্যটাকেও তেমনি সর্বোচ্চে স্বীকার করিয়া লইয়া তাহার পরে তাহার প্রতি মনোযোগ না করিলেও বোধ করি কেহই লক্ষ্য করিবেন না । অতএব এই সম্মিলনসভার উদ্বেগু কী, তাহা লইয়া বৃথা আলোচনা না করিয়া, ইহার কারণটা কী, সেটা দেখা যাইতে পারে। সাহিত্যসম্মিলনের নামে বাংলার নানা প্রদেশের লোক বরিশালে আহুত হইয়াছিল—এতকাল পরে আজই এমনতরো একটা ব্যাপার যে ঘটিল, তাহার তাৎপর্য কী ? বাংলাসাহিত্যের প্রতি অনুরাগ যে হঠাৎ বস্তার মতো একরাত্রে বাড়িয়া উঠিয়াছে, তাহা নহে। আসল কথা এই যে, সমস্ত বাংলাদেশে একটা মিলনের দক্ষিণ-হাওয়া দিয়াছে । দেখিতে দেখিতে বাংলাদেশে চারিদিকে কত সমিতি কত সম্প্রদায় যে দানা বাধিয়া উঠিয়াছে, তাহার ঠিকানা নাই। আজ আমরা যতরকম করিয়া পারি, মিলিতে চাই । আমরা যে-কোনো একটা উদ্বেগু খাড়া করিয়া দিয়া যে-কোনো একটা স্বত্র লইয়া পরস্পরকে বাধিতে চাই। কতকাল ধরিয়া আমাদের দেশের প্রধান পক্ষেরা বলিয়া আসিয়াছেন, এক না হইতে পারিলে আমাদের রক্ষা নাই, কবির ছন্দেবন্ধে ঐক্যের মহিমা ঘোষণা করিয়া আসিয়াছেন, নীতিজ্ঞেরা বলিয়াছেন তৃণ একত্র করিয়া পাকাইলে হাতিকে বাধা যায়—তবু দীর্ঘকাল হাতি বাধিবার জন্ত কাহারও কোনো উদযোগ দেখা যায় নাই। কিন্তু শুভলগ্নে ঐক্যের দানা বাধিবার যখন সময় আসিল, তখন হঠাৎ একটা আঘাতেই সমস্ত দেশে একটা কী টান পড়িয়া গেল,—ষে যেখানে পারে সেইখানেই একটা কোনো নাম লইয়া একটা কিছু সংহতির মধ্যে ধরা দিবার জন্ত ব্যাকুলত অনুভব করিতে লাগিল। এখন এই আবেগ থামাইয়া রাখা দায়। স্বদেশের মাঝখান হইতে মিলনের টান পড়িতেই মাতৃকক্ষের ছোটোবড়ো সমস্ত দরজাজানলা খুলিয়া গেছে। কে আমাদিগকে চলিতে বলিতেছে। উদ্বেগু কী ? উন্ধেগু তো পরিষ্কার করিয়া কিছুই বলিতে পারি না। যদি বানাইয়া বলিতে বল, তবে বড়ো বড়ো নামওয়াল উদ্বেগু বানাইয়া দেওয়া কিছুই শক্ত নয়। কুঁড়ি যে কেন বাধা ছিড়িয়া ফুল হইয় ফুটিতে চায়, তাহ ফুলের বিধাতাই নিশ্চয় জানেন, কিন্তু দক্ষিণে হাওয়া দিলে সাধা কী সে চুপ করিয়া থাকে। তাহার কোনো