পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ᎽᏬ রবীন্দ্র-রচনাবলী কৈফিয়ত নাই, তাহার একমাত্র বলিবার কথা, আমি থাকিতে পারিলাম না। ংলাদেশের এমনি একটা খ্যাপা অবস্থায় আজ রাজনীতিকের দল তাহাদের গড়ের বাদ্য বাজাইয়া চলিয়াছেন, বিদ্যাধীর দলও কলরবে যাত্রাপথ মুখরিত করিয়াছেন, ছাত্রগণও স্বদেশী ব্যবসায়ের রথের রশি ধরিয়া উচুনিচু পথের কাকরগুলা দলিয়া পা কাটিয়া রক্ত বাহির করিয়া দিয়াছেন—আর আমরা সাহিত্যিকের দলই কি চুপ করিয়া থাকিতে পারি ? যজ্ঞে কি আমাদেরই নিমন্ত্রণ নাই ? সে কী কথা ? নাই তো কী ? এ-যজ্ঞে আমরাই সকলের বেশি মর্যাদা দাবি করিব। দেশলক্ষ্মীর দক্ষিণ হস্ত হইতে শ্বেতচন্দনের ফোটা আমরাই সকলের আগে আদায় করিয়া ছাড়িব । ইহাতে কেহ ঝগড়া করিতে আসিলে চলিবে না। আমাদের অন্য ভাইরা, যাহারা সুদীর্ঘকাল পশ্চিমমুখে আসন করিয়া পাষাণদেবতার বধির কানটার কাছে র্কাসরঘণ্টা বাজাইতে বাজাইতে ডান হাতটাকে একেবারে অবসন্ন করিয়া ফেলিয়াছেন, তাহারাই যে আমাদিগকে পিছনে ঠেলিয়া আজ প্রধান হইয়া দাড়াইবেন, এ আমরা সহ করিব কেন ? স্বদেশের মিলনক্ষেত্রে একদিন যখন কাহারও কোনো সাড়াশব্দ ছিল না, যখন ইহাকে শ্মশান বলিয়া ভ্রম হইত, তখন সাহিত্যই কোদাল কাধে করিয়া ইহার পথ পরিষ্কার করিতে বাহির হইয়াছিল। সেই পথ বাংলার উত্তরে দক্ষিণে পূর্বে পশ্চিমে বিস্তৃত হইয়াছে । সেই পথকে ক্রমশই চওড়া করিয়া পৃথিবীর অন্যান্ত বড়ো বড়ো পণ্যপ্রবাহী রাজপথগুলির সঙ্গে মিলাইয়া দিবার আয়োজন কে করিয়াছিল ? একবার ভাবিয়া দেখুন, বাঙালিকে আমরা যে বাঙালি বলিয়া অনুভব করিতেছি, তাহা মানচিত্রে কোনো কৃত্রিম রেখার জন্ত নহে। বাঙালির ঐক্যের মূলস্থত্রটি কী ? আমরা এক ভাষায় কথা কই । আমরা দেশের একপ্রান্তে ষে-বেদনা অনুভব করি, ভাষার দ্বারা দেশের অপর সীমাস্তে তাহা সঞ্চার করিয়া দিতে পারি— রাজা তাহার সমস্ত সৈন্যদল খাড়া করিয়া তাহার রাজদণ্ডের সমস্ত বিভীষিকা উষ্ঠত করিয়াও ইহা পারেন না। শতবৎসর পূর্বে আমাদের পূর্বপুরুষ যে-গান গাহিয়া গিয়াছেন, শতবংসর পরেও সেই গান বাঙালির কণ্ঠ হইতে উৎপাটিত করিতে পারে, এতবড়ো তরবারি কোনে রাজাস্ত্রশালায় আজো শানিত হয় নাই। এ কি সামান্ত শক্তি আমাদের প্রত্যেক বাঙালির হাতে আছে ? এ-শক্তি ভিক্ষালব্ধ নহে। ভূমিষ্ঠ হইবার পরক্ষণ হইতেই জননীর স্বধাকণ্ঠ হইতে স্নেহবিগলিত এই শক্তি আমরা আনন্দের সহিত সমস্ত মনপ্রাণ দিয়া আকর্ষণ করিয়া লইয়াছি এবং এই চিরন্তন শক্তিযোগে সমস্ত দূরত্ব লঙ্ঘন করিয়া অপরিচয়ের সমস্ত বাধা ভেদ