পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী واG o ভালোবাসে সে অকুরাগের সহিত স্বদেশের সমস্ত সন্ধান নিজে রাখে, পরের পুথির প্রত্যাশায় তাকাইয়া থাকে না, স্বদেশের সেবা যথাসাধ্য নিজে করে, কেবল পরের কর্তব্যবোধকে জাগ্রত করিবার উপায় সন্ধান করে না, বিদেশী ব্যবসায়ীর সম্পদকে নিজের সম্পূর্ণ ব্যবহারে আনিতে চেষ্টা করে, বিদেশী ব্যবসায়ীর অগুভাগমনের প্রতীক্ষায় নিজেকে পথের কাঙাল করিয়া রাখে না । তাই আজ আমি আমাদের ছাত্রগণকে বলিতেছি, দেশের উপরে সর্বাগ্রে সর্বপ্রযত্নে জ্ঞানের অধিকার বিস্তার করো, তাহার পরে প্রেমের এবং কর্মের অধিকার সহজে প্রশস্ত হইতে থাকিবে। আজ আমি বাংলাদেশের দুই বিভিন্নকালের উদয়াস্ত-সন্ধিস্থলে দাড়াইয়া, হে ছাত্ৰগণ, কবির বাণী স্মরণ করিতেছি— যাত্যেকতোহস্তশিখরং পতিরোবধানাম্। আবিষ্কৃতারণপুরঃসর একতোহুর্কং ॥ এখন আমাদের কালের শীতরশ্মিচন্দ্রমা অস্তমিত হইতেছে, তোমাদের কালের তেজ-উদভাসিত স্বর্যোদয় আসন্ন—তোমরা তাহারই অরুণসারথি । আমরা ছিলাম দেশের স্বপ্তিজালজড়িত নিশীথে ; অন্যত্র হইতে প্রতিফলিত ক্ষীণজ্যোতিতে আমরা দীর্ঘরাত্রি অপরিস্ফুট ছায়ালোকের মায়া বিস্তার করিতেছিলাম। আমাদের সেই কর্মহীনকালে কত অলীক বিভ্রম এবং অকারণ আতঙ্ক দিগন্তব্যাপী অস্পষ্টতার মধ্যে প্রেমের মতো সঞ্চরণ করিতেছিল। আজ তোমরা পূর্বগগনে নিজের আলোকে দীপ্তিমান হইয়া উঠিতেছ। এখনো জল-স্থল-আকাশ নিস্তব্ধ হইয়া নবজীবনের পূর্ণ বিকাশের জন্য প্রতীক্ষা করিয়া আছে ; অনতিকাল পরেই গৃহে-গৃহে পথে-পথে কর্মকোলাহল জাগ্রত হইয়া উঠিবে। এই কর্মদিনের প্রখরদীপ্তি দেশের সমস্ত রহস্ত ভেদ করিবে—ছোটোবড়ো সমস্তই তোমাদের তীক্ষ্ণদৃষ্টির সম্মুখে উদ্ভাসিত হইয়া উঠিবে। তখন তোমাদের কবি-বিহঙ্গগণ আকাশে যে-গান গাহিবে, তাহাতে অবসাদের আবেশ ও মুপ্তির জড়িমা থাকিবে না—তাহা প্রত্যক্ষ আলোকের আনন্দে, তাহা করতললন্ধ সত্যের উৎসাহে সহস্র জীবন হইতে সহস্র ধারায় উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠিবে। এই জ্যোতির্ময় আশাদীপ্ত প্রভাতকে স্বমহান স্বন্দর পরিণামে বহন করিয়া লইবার ভার তোমাদের হস্তে সমর্পণ করিয়া আমরা বিদায়ের নেপথ্যপথে যাত্রা করিতে উষ্ঠত হইলাম। তোমাদের উদয়পথ মেঘনিমুক্ত হউক, এই আমাদের আশীৰ্বাদ । \9)\రి