পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(tebo রবীন্দ্র-রচনাবলী হয় তো হ’ক। আমাদিগকে ভুল করিতে দাও, গোল করিতে দাও, বাজে কাজ করিতে দাও, পাচজন লোককে ডাকিতে ও পাচজায়গায় ঘুরিতে দাও। এই নড়াচড়া চলুক। এই নড়াচড়ার দ্বারাই, যেটা যে-ভাবে গড়িবার সেটা ক্রমে গড়িয়া ওঠে, যেটা বাহুল্য সেটা আপনি বাদ পড়ে, যেটা বিকৃতি সেটার সংশোধন হইতে থাকে। বিবেচকভাবে চুপচাপ করিয়া থাকিলে তাহার কিছুই হয় না। আমাদের মনটা যে স্থির হইয়া নাই, দেশের নানাস্থানেই যে ছোটোবড়ো ঘূর্ণাবেগ আজকাল কেবলই প্রকাশ পাইতেছে, ইহাতে বুঝা যাইতেছে, একটা স্বষ্টির প্রক্রিয়া চলিতেছে। ঘুরিতে ঘুরিতে জ্যোতির্বাষ্পই যে কেবল আকার ধারণ করে, তাহা নহে-মানুষের মনগুলি যখন গতির বেগ পায়, তখন তাহারা জমাট বাধিয়া একটা কিছু গঠন না করিয়া থাকিতে পারে না। অন্তত, আমরা যদি কিছু গড়িয়া তুলিতে চাই, তবে এই প্রকার বেগবান অবস্থাই তাহার পক্ষে অনুকূল। কুমোরের চাকা যখন ঘুরিতে থাকে, তখনই কুমোর যাহা পারে গড়িয়া লয় ; যখন তাহা স্থির থাকে, তখন তাহার কাছে প্রত্যাশা করিবার কিছুই থাকে না । আজ দেশের মধ্যে চারিদিকে যে একটা বেগের সঞ্চার দেখা যাইতেছে, তাহাতেই হঠাৎ দেশের কাছে আমাদের সমস্ত প্রত্যাশাই বাড়িয়া গেছে । আমাদের যাহার মনে যে-উদ্দেশ্য আছে, এই বেগের স্বযোগে তাহ সিদ্ধ করিয়া লইবার জন্ত আমরা সকলেই চকিত হইয়া উঠিয়াছি । আজ আমরা দশজনে যে-কোনো উপলক্ষ্যে একত্র হইলেই তাহার মধ্য হইতে কিছু একটা মথিয়া উঠিবে, এমন ভরসা হয় । এই রকম সময়ে যাহা অনপেক্ষিত, তাহাও দেখা দেয়, যাহাকে আশা করিবার কোনো কারণ ছিল না, তাহাও হঠাৎ সম্ভব হইয়া উঠে । আমাদের প্রত্যেকের শক্তি সামান্ত হইলেও সমস্ত সমাজের বেগে ক্ষণে ক্ষণে অসাধ্যসাধন হইতে থাকে। আজ আমাদের সাহিত্য-পরিষদেরও অাশা বাড়িয়া গেছে । এই যে এখানে নানা জেলা হইতে আমরা বাঙালি একত্র হইয়াছি, এখানে শুধু একটা মিলনের জানন্দেই এই সম্মিলনকে শেষ করিয়া দিয়া যাইব, এমন আমরা মনে করি না—হয়তো এইবারেই, ফল যেমন যথাসময়ে ভাল ছাড়িয়া ঠিকমতো জমিতে পড়ে ও গাছ হুইবার পথে যায়, সাহিত্য-পরিষদও সেইরূপ নিজেকে বৃহৎ বাংলাদেশের মধ্যে রোপিত করিবার অবসর পাইবে । এবার হয়তো সে বৃহত্তর জন্ম লাভ করিবার জন্ত ৰাছির হইয়াছে। আপনাদের জাহান শুধু সমাদরের আহবান নহে, তাহ সফলতার জাহান। আমরা তো এইমতোই আশা করিয়াছি। যদি আশা বৃথাই হয়, তবু মিলনটা তো কেহ বাড়িয়া লইবে না –বুদ্ধিমান