পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য @ »ፃ ললিয়াই সে-সকল দেশে সভ্যতার এত শাখাপ্রশাখা, এত পল্লব, এত ফুলফলের প্রাচুর্য। এই গোড়াকার অত্যস্ত সাধারণ কাজগুলির মধ্যে যে-কোনোএকটা কাজ করিয়া তোলাই যে আমাদের পক্ষে অসাধারণ হইয়া উঠিয়াছে। দেশের লোককে শিখাইতে হইবে, তাহার উযোগ করিতেই প্রাণ বাহির হইয়া যায় ; খাওয়াইতে হইবে, তাহার সংগতি নাই ; রোগ দূর করিতে হইবে, সাহেব এবং বিধাতার উপর ভার দিয়া বসিয়া আছি। মাষ্ট্ৰসানি, গারিবাল্ডি, হাম্প ডেন, ক্রমোয়েল হইয়া উঠাই যে একমাত্র বড়ো কাজ, তাহা নহে ; তাহার পূর্বে গ্রামের মোড়ল, পাঠশালার গুরুমহাশয়, পাড়ার মুরুব্বি, চাষাভূষার সর্দার হইতে ন পারিলে বিদেশের ইতিবৃত্তকে ব্যঙ্গ করিবার চেষ্টা একান্তই প্রহসনে পরিণত হইবে । আগে দেশকে স্বদেশ করিতে হইবে, তার পরে রাজ্যকে স্বরাজ্য করিবার কথা মুখে আনিতে পারিব । অতএব পরিষদের কাজ কী হিসাবে বড়ো কাজ, এ-প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিয়ো না—এ-সমস্ত গোড়াকার কাজ—ইহার ছোটোবড়ো নাই । দেশকে ভালোবাসিবার প্রথম লক্ষণ ও প্রথম কর্তব্য দেশকে জানা— এই কথাটা আমাদের দেশ ছাড়া আর-কোনো দেশে উল্লেখমাত্র করাই বাহুল্য । পৃথিবীর অন্তত্ৰ সকলেই আপনার দেশকে বিশেষ করিয়া, তন্ন তন্ন করিয়া জানিতেছে । না জানিলে দেশের কাজ করা যায় না। শুধু তাই নয়—এই জানিবার চর্চাই ভালোবাসার চর্চা। দেশের ছোটোবড়ো সমস্ত বিষয়ের প্রতি সচেতন দৃষ্টি প্রয়োগ করিলেই তবে সে আমার আপন ও আমার পক্ষে সত্য হইয়া উঠে । নহিলে দেশহিতসম্বন্ধে পুথিগত শিক্ষা লইয়া আমরা যে-সকল বড়ো বড়ো কথা বার্ক-মেকলের ভাষায় আবৃত্তি করিতে থাকি, সেগুলো বড়োই বেমুরো শোনায় । তাই দেশের ভাষা, পুরাবৃত্ত, সাহিত্য প্রভৃতি সকল দিক দিয়া দেশকে জানিবার জন্ত সাহিত্য-পরিষৎ প্রবৃত্ত হইয়াছেন। বাংলাদেশের সকল জেলাই যদি তাহার সঙ্গে সচেষ্টভাবে যোগ দেন, তবেই তাহার উদ্বেগু সফল হইবে। সফলতা দুইদিক দিয়াই হইবে—এক, যোগের সফলতা, আর এক সিদ্ধির সফলতা। আজ বরিশাল ও বহরমপুর যে আমাদিগকে আহবান করিয়াছেন, ইহাতে মনে মনে আশা হইতেছে, আমাদের বহুদিনের চেষ্টার সার্থকতা আসন্ন হইয়া আসিয়াছে। দীপশিখা জালিবার দুইটা অবস্থা আছে। তাহার প্রথম অবস্থা চকমকি ঠোকা । সাহিত্য-পরিষৎ কাজ আরম্ভ করিয়া প্রথম কিছুদিন চকমকি খুঁকিতেছিল, তাহাতে বিচ্ছিন্নভাবে ফুলিঙ্গ বাহির হইতেছিল। দেশে বুঝি তখনো পলিতা পাকানো