( ՖԵ- রবীন্দ্র-রচনাবলী হয় নাই অর্থাৎ দেশের হৃদয়গুলি এক প্রাস্ত হইতে আর এক প্রাস্ত পর্যন্ত একসূত্রে পাকাইয়া ওঠে নাই। তার পরে স্পষ্টই দেখিতেছি, আমাদের দেশে হঠাৎ একটা শুভদিন আসিয়াছে—যেমন করিয়াই হউক, আমাদের হৃদয়ে হৃদয়ে একটা যোগ হইয়াছে—তাহা হইবামাত্র দেশের যেখানে যে-কোনো আশা ও যে-কোনো কর্ম মরোমরে হইয়াছিল, তাহারা সকলেই যেন একসঙ্গে রস পাইয়া নবীন হইয়া উঠিয়াছে। সাহিত্য-পরিষদও এই অমৃতের ভাগ হইতে বঞ্চিত হয় নাই। এইবার তাহার বিক্ষিপ্ত ফুলিঙ্গ যদি শুভদৈবক্রমে পলিতার মুখে ধরিয়া উঠে, তবে একটি অবিচ্ছিন্ন শিখারূপে দেশের অন্তঃপুরকে সে আলোকিত করিয়া তুলিতে পারিবে । অতএব বিশেষ করিয়া বহরমপুরের প্রতি এবং সেই সঙ্গে বাংলাদেশের সমস্ত জেলার কাছে আজ আমাদের নিবেদন এই যে, সাহিত্য-পরিষদের চেষ্টাকে আপনারা অবিচ্ছিন্ন করুন—দেশের হৃদয়-পলিতাটির একটা প্রান্ত ধরিয়া উঠিতে দিন, তাহ হইলে একটি ক্ষুদ্র সভার প্রয়াস সমস্ত দেশের আধারে তাহার স্বাভাবিক প্রতিষ্ঠা লাভ করিয়া অমর হইয়া উঠিবে। আমাদের অদ্যকার এই মিলনের আনন্দ স্থায়ী যোগের আনন্দে যদি পরিণত হয়, তবে যে চিরন্তন মহাযজ্ঞের অনুষ্ঠান হইবে, সেখানে ভাগীরথীর তীর হইতে ব্ৰহ্মপুত্রের তীর পর্যন্ত, সমুদ্রকুল হইতে হিমাচলের পাদদেশ পর্যন্ত বাংলাদেশের সমস্ত প্রদেশ আপন উদঘাটিত প্রাণভাণ্ডারের বিচিত্ৰ ঐশ্বৰ্ষ বহনপূর্বক এক ক্ষেত্রে মিলিত হইয় তাহাকে পুণ্যক্ষেত্র করিয়া তুলিবে। আপনার মনে করিবেন না, আমাদের এ-সভা কেবল বিশেষ একটি কাৰ্ধসাধন করিবার সভামাত্র। দেশের অন্তকার পরম দুঃখদারিদ্র্যের দিনে যে-কোনো মঙ্গলকর্মের প্রতিষ্ঠান আমরা রচনা করিয়া তুলিতে পারিব, তাহ শুদ্ধমাত্র কাজের আপিস হইবে না, তাহা তপস্তার আশ্রম হইয়া উঠিবে—সেখানে আমাদের প্রত্যেকের নিঃস্বার্থ সাধনার দ্বারা সমস্ত দেশের বহুকালসঞ্চিত অকৃতকর্তব্যের অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত হইতে থাকিৰে। এই সমস্ত পাপের ভরা পরিপূর্ণ হইয়া উঠিয়াছে বলিয়াই আজ দেশের অতি ছোটো কাজটিও আমাদের পক্ষে এত একাস্ত দুঃসাধ্য হইয়াছে। আজ হইতে কেবলই কর্মের দ্বারাই কর্মের এই সমস্ত কঠিন বাধা ক্ষয় করিবার জন্ত আমাদিগকে প্রবৃত্ত হইতে হইবে । হাতে-হাতে ফল পাইব, এমন নহে—বারংবার ব্যর্থ হইতে হইবে, কিন্তু তবু অপরাধমোচন হইবে, বাধা জীর্ণ হইবে, দেশের ভবিতব্যতার রুদ্রমুখচ্ছবি প্রতিদিন প্রসর হইয়া আসিবে । }\లిలి
