পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

é२२ রবীন্দ্র-রচনাবলী কিন্তু অনেক সময় উদ্দেশু বাইরে থেকে দেখতে পাওয়া যায়। হরিণের গায়ে চিহ্ন আছে কেন হরিণ তা জানে না, কিন্তু হরিণ সম্বন্ধে যারা বই লেখেন তারা বলেন, এর উদ্দেশ্য হচ্ছে এই সমস্ত চিহ্নের দ্বারা বনের আলোছায়ার সঙ্গে সে বেমালুম মিশিয়ে থাকতে পারবে । এই আন্দাজ সত্যও হতে পারে মিথ্যাও হতে পারে কিন্তু উদ্দেশুটা যে হরিণের মনের নয় সে-কথা সকলকেই মানতে হবে। উদ্দেশু হরিণের নয় কিন্তু হরিণের ভিতর দিয়ে বিশ্বকৰ্মার একটা উদ্দেশ্য তো প্রকাশ পাচ্ছে । তা হয়তে পাচ্ছে । তেমনি যে-কালে লেখক জন্মগ্রহণ করেছে সেই কালটি লেখকের ভিতর দিয়ে হয়তো আপন উদ্দেশ্য ফুটিয়ে তুলেছে। তাকে উদ্দেশ্য নাম দিতে পারি বা না পারি, এ-কথা বলা চলে যে, লেখকের কাল লেখকের চিত্তের মধ্যে গোচরে ও অগোচরে কাজ করছে । আমি বলছি এ-কাজও শিল্পকাজ ;–শিক্ষাদানের কাজ নয় । কাল আমাদের মনের মধ্যে তার নানা রঙের স্বতোয় জাল বুনছে, সেই তার স্বাক্ট, আমি তার থেকে যদি কিছু আদায় করতে চাই তবে সে উদ্দেশ্য আমারই । আমাদের দেশের আধুনিক কাল গোপনে লেখকের মনে যে-সব রেখাপাত করেছে, ঘরে-বাইরে গল্পের মধ্যে তার ছাপ পড়েছে । কিন্তু এই ছাপার কাজ শিল্পকাজ। এর ভিতর থেকে যদি কোনো সুশিক্ষণ বা কুশিক্ষা আদায় করবার থাকে সেটা লেখকের উদ্দেশ্যের অঙ্গ নয়। পৃথিবীর খুব একজন বড়ো লেখকের লেখা সামনে ধরা যাক। শেকস্পীয়রের ওথেলো। কবিকে যদি জিজ্ঞাসা করা যায় তার উদ্বেগু কী, তিনি মুশকিলে পড়বেন । ভেবে চিস্তে যদি বা কোনো উত্তর দেন নিশ্চয়ই সেটা ভুল উত্তর হবে । আমি যদি ব্রাহ্মণ-সভার সভ্য হই তবে আমি ঠিক করব কবির উদ্দেশু বর্ণভেদ বাচিয়ে চলা সম্বন্ধে জগৎকে সদ্ধপদেশ দেওয়া। যদি স্বাধীন জেনেনার বিরুদ্ধপক্ষ হই তাহলে বলব, পরপুরুষের মুখদর্শন পরিহার করতে বলাই কবির পরামর্শ। কিংবা কবির বুদ্ধি বা ধৰ্মজ্ঞানের প্রতি যদি আমার সন্দেহ থাকে তা হলে বলব, একনিষ্ঠ পাতিত্ৰত্যের নিদারুণ পরিণাম দেখিয়ে তিনি সতীত্বের