পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SVeltr রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী শুধু কেবল আমার খেলা ছিল মনের ক্ষুধায়, চোখের দেখায়, নারকেলের দোদুল ডালে, দূর বাড়ির রোদ-পোহানো ছাদে । অশোকবনে এসেছিল হনুমান, সেদিন সীতা পেয়েছিলেন নবদুর্বদলশ্যাম রামচন্দ্রের খবর। । আমার হনুমান আসত বছরে বছরে আষাঢ় মাসে আকাশ কালো করে। সজল নবনীল মেঘে । আনত তার মেদুর কষ্ঠে দুরের বার্তা, যে দুরের অধিকার থেকে আমি নির্বাসিত । ইমারত-ঘেরা ক্লিষ্ট যে আকাশটুকু তাকিয়ে থাকত একদৃষ্ট্রে আমার মুখে, বাদলের দিনে গুরুগুরু করে তার বুক উঠল দুলে । বট গাছের মাথা পেরিয়ে কেশরী ফুলিয়ে দলে দলে মেঘ জুটত ডানাওয়ালা কালো সিংহের মতো । নারকেল-ডালের সবুজ হত নিবিড়, পুকুরের জল উঠত। শিউরে শিউরে । যে চাঞ্চল্য শিশুর জীবনে রুদ্ধ ছিল সেই চাঞ্চল্য বাতাসে বাতাসে, বনে বনে । পুব দিকের ও পার থেকে বিরাট এক ছেলেমানুষ ছাড়া পেয়েছে আকাশে, আমার সঙ্গে সে সাথি পাতালে । বৃষ্টি পড়ে ঝমােঝম । একে একে পুকুরের পৈঠা যায় জলে ডুবে । আরো বৃষ্টি, আরো বৃষ্টি, আরো বৃষ্টি । ” রাত্তির হয়ে আসে, শুতে যাই বিছানায়, খোলা জানলা দিয়ে গন্ধ পাই ভিজে জঙ্গলের । উঠোনে একইটু জল, ছাদের নালার মুখ থেকে জলে পড়ছে জল মোটা ধারায় । ভোরবেলায় ছুটেছি। দক্ষিণের জানলায়, পুকুর গেছে ভেসে ; জলের উপর বেলগাছগুলোর বঁাকড়া মাথা জেগে থাকে । পাড়ার লোকে হৈ হৈ করে এসেছে। গামছা দিয়ে ধুতির কোচা দিয়ে মাছ ধরতে । কাল পর্যন্ত পুকুরটা ছিল আমারি মতো বাধা, এ বোলা ও বেলা তার উপরে পড়ত গাছের ছায়া, উড়ো মেঘ জলে বুলিয়ে যেত ক্ষণিকের ছায়াতুলি, বটের ডালের ভিতর দিয়ে যেন সোনার পিচকারিতে ছিটকে পড়ত। তার উপরে আলো