পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রক্তকরবী S)ዒ 6ነ নন্দিনী । শুনেছি, সে কিসের আর্তনাদ ? নেপথ্যে । সৃষ্টিকর্তার চাতুরী। আমি ভাঙি । বিশ্বের মর্মস্থানে যা লুকোনো আছে তা ছিনিয়ে নিতে চাই, সেই সব ছিন্ন প্ৰাণের কান্না । গাছের থেকে আগুন চুরি করতে হলে তাকে পোড়াতে হয় । নন্দিনী, তোমার ভিতরেও আছে আগুন, রাঙা আগুন। একদিন দাহন করে তাকে বের করব, তার আগে নিস্কৃতি নেই। নন্দিনী । কেন তুমি নিষ্ঠুর ? নেপথ্যে । আমি হয় পাব, নয় নষ্ট করব । যাকে পাই নে তাকে দয়া করতে পারি নে। তাকে ভেঙে ফেলাও খুব একরকম করে পাওয়া । নন্দিনী । ও কী, অমন মুঠো পাকিয়ে হাত বের করছ কেন । নেপথ্যে । আচ্ছা, হাত সরিয়ে নিচ্ছি। পালাও তুমি, পায়রা যেমন পালায় বাজপাখির ছায়া দেখে । নন্দিনী । আচ্ছা যাই, আর তোমাকে রাগাব না । নেপথ্যে । শোনো শোনো, ফিরে এসো তুমি । নন্দিনী ! নন্দিনী ! নন্দিনী । কী, বলো । নেপথ্যে । সামনে তোমার মুখে চােখে প্ৰাণের লীলা, আর পিছনে তোমার কালো চুলের ধারা মৃত্যুর নিস্তব্ধ ঝরনা। আমার এই হাতদুটাে সেদিন তার মধ্যে ডুব দিয়ে মরবার আরাম পেয়েছিল। মরণের মাধুর্য আর কখনো এমন করে ভাবি নি ! সেই গুচ্ছ গুচ্ছ কালো চুলের নীচে মুখ ঢেকে ঘুমোতে ভারি ইচ্ছে করছে । তুমি জানো না, আমি কত শ্ৰান্ত । নন্দিনী । তুমি কি কখনো ঘুমেও না । নেপথ্যে । ঘুমোতে ভয় করে । নন্দিনী । তোমাকে আমার গানটা শেষ করে শুনিয়ে দিই— এই সুরে কাছে দূরে জলে স্থলে বাজায় বঁাশি । আকাশে কার বুকের মাঝে ব্যথা বাজে, দিগন্তে কার কালো আঁখি আঁখির জলে যায় গো ভাসি । নেপথ্যে । থাক থাক থামো তুমি, আর গেয়ে না । •ान्फ्रिी । সেই সুরে সাগরকুলে বঁধন খুলে অতল রোদন উঠে দুলে । সেই সুরে বাজে মনে অকারণে ভুলে-যাওয়া গানের বাণী, ভোলা দিনের কঁাদন হাসি । পাগলভাই, ঐ-যে মরা ব্যাঙটা ফেলে রেখে দিয়ে কখন পালিয়েছে। গান শুনতে ও ভয় পায় ! বিশু । ওর বুকের মধ্যে যে বুড়ো ব্যাঙটা সকল রকম সুরের ছোয়াচ বঁচিয়ে আছে, গান শুনলে তার মরতে ইচ্ছে করে । তাই ওর ভয় লাগে - পাগলি, আজ তোর মুখে একটা দীপ্তি দেখছি, মনের মধ্যে কোন ভাবনার অরুণোদয় হয়েছে আমাকে বলবি নে ? নন্দিনী । মনের মধ্যে খবর এসে পৌচেছে, আজ নিশ্চয় রঞ্জন আসবে। বিশু । নিশ্চয় খবর এল কোন দিক থেকে । নন্দিনী । তবে শোনো বলি । আমার জানলার সামনে ডালিমের ডালে রোজ নীলকণ্ঠপাখি এসে বসে । আমি সন্ধে হলেই ধ্রুবতারাকে প্ৰণাম করে বলি, ওর ডানার একটি পালক আমার ঘরে এসে যদি উড়ে পড়ে