পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রক্তকরবী \9bምw© কিশোরের প্রবেশ কিশোর। হাঁ নন্দিনী, এখনই তার সঙ্গে দেখা হবে, মনটা ঠিক করে রাখে। জানি নে, প্রহরীদের কর্তা আমার মুখ দেখে কেন দয়া করলে। আমার অনুরোধে এই পথ দিয়ে বিশুকে নিয়ে যেতে রাজি হল । বিশুকে নিয়ে প্রহরীর প্রবেশ ভয় নেই, কিছু ভয় করিস নে। পাগলি, এতদিন পরে আমার মুক্তি হল। নন্দিনী । কী বলছি বুঝতে পারছি নে । বিশু । যখন ভয়ে-ভয়ে পদে-পদে বিপদ সামলে চলতুম তখন ছাড়া ছিলুম। সেই ছাড়ার মতো বন্ধন বিশু । এতেই বা ক্ষতি কী হল । সত্যের মধ্যে মুক্তি পেয়েছি- এ বন্ধন তারই সত্য সাক্ষী হয়ে রইল । নন্দিনী । ওরা তোমাকে পশুর মতো রাস্তা দিয়ে বেঁধে নিয়ে চলেছে, ওদের নিজেরই লজ্জা করছে না ? ছি ছি, ওরাও তো মানুষ ! বিশু । ভিতরে মস্ত একটা পশু রয়েছে-যে- মানুষের অপমানে ওদের মাথা হেঁট হয় না, ভিতরকার জানোয়ারটার লেজ ফুলতে থাকে, দুলতে থাকে । , নন্দিনী । আহা পাগলভাই, ওরা কি তোমাকে মেরেছে । এ কিসের চিহ্ন তোমার গায়ে । বিশু । চাবুক মেরেছে, যে চাবুক দিয়ে ওরা কুকুর মারে । যে রশিতে এই চাবুক তৈরি সেই রশির সুতো দিয়েই ওদের গোসাঁইয়ের জপমালা তৈরি । যখন ঠাকুরের নাম জপ করে তখন সে কথা ওরা ভুলে যায়, কিন্তু ঠাকুর খবর রাখেন । নন্দিনী । আমাকেও এমনি করে তোমার সঙ্গে বেঁধে নিয়ে যাক, ভাই আমার । তোমার এই মার আমিও যদি কিছু না পাই তবে আজ থেকে মুখে অন্ন রুচিবে না। কিশোর। বিশু, আমি যদি চেষ্টা করি নিশ্চয় ওরা তোমার বদলে আমাকে নিতে পারে। সেই অনুমতি করো তুমি । বিশু । এ-যে তোর পাগলের মতো কথা । কিশোর । শাস্তিতে তো আমাকে বাজবে না, আমার বয়স অল্প, আমি খুশি হয়ে সইতে পারব। নন্দিনী । আহা, না কিশোর, ও কথা বলিস নে । কিশোর। নন্দিনী, আমি কাজ কামাই করেছি, ওরা তা টের পেয়েছে। আমার পিছনে ডালকুত্তা লাগিয়েছে । তারা যে অপমান করবে, এই শান্তি তার থেকে আমাকে বাচাবে । বিশু । না কিশোর, এখনো ধরা পড়লে চলবে না । একটা বিপদের কাজ করবার আছে। রজন। এখানে এসেছে, যেমন করে পরিস তাকে বের করতে হবে । সহজ নয় । কিশোর । নন্দিনী, তা হলে বিদায় নিলুম। রঞ্জনের সঙ্গে দেখা হলে তোমার কোন কথা তাকে জানাবু ? নন্দিনী । কিছু না । তাকে এই রক্তকরবীর গুচ্ছ দিলেই আমার সব কথা জানানো হবে। [কিশোরের প্রস্থান brS