পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Vors রবীন্দ্র-রচনাবলী বিশু । এইবার রঞ্জনের সঙ্গে তোমার মিলন হােক । নন্দিনী । মিলনে আমার আর সুখ হবে না। এ কথা কোনোদিন ভুলতে পারব না যে, তোমাকে শূন্যহাতে বিদায় দিয়েছি। আর ঐ-যে বালক কিশোর, ও আমার কাছ থেকে কী বা পেলে । বিশু । মনে যে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছ, তাতে ওর অন্তরের ধন সব প্রকাশ পেয়েছে। আর কী চাই । মনে আছে, সেই নীলকণ্ঠের পালক রঞ্জনের চূড়ায় পরিয়ে দিতে হবে ? নন্দিনী । এই-যে রয়েছে আমার বুকের আঁচলে । বিশু । পাগলি, শুনতে পাচ্ছিস ঐ ফসলকাটার গান ? নন্দিনী । শুনতে পাচ্ছি, প্ৰাণ কেঁদে উঠছে। বিশু । মাঠের লীলা শেষ হল, খেতের মালিক পাকা ফসল ঘরে নিয়ে চলল। চলো প্রহরী, আর দেরি R 하iG শেষ ফলনের ফসল এবার কেটেলও বঁাধো আঁটি, বাকি যা নয় গো নেবার মাটিতে হোক তা মাটি । [সকলের প্রস্থান চিকিৎসক ও সর্দারের প্রবেশ চিকিৎসক । দেখলুম। রাজা নিজের পরে নিজে বিরক্ত হয়ে উঠেছেন । এ রোগ বাইরের নয়, মনের । সর্দার । এর প্রতিকার কী । চিকিৎসক । বড়োরকমের ধাক্কা । হয়। অন্য রাজ্যের সঙ্গে, নয় নিজের প্রজাদের মধ্যে উৎপাত বাধিয়ে (NSG সর্দার । অর্থাৎ আর-কারও ক্ষতি করতে না দিলে, উনি নিজের ক্ষতি করবেন। চিকিৎসক । ওরা বড়োলোক, বড়ো শিশু, খেলা করে । একটা খেলায় যখন বিরক্ত হয়, তখন আর একটা খেলা না জুগিয়ে দিলে নিজের খেলনা ভাঙে ৷ কিন্তু প্ৰস্তুত থাকো সর্দার, আর বড়ো দেরি নেই। সর্দার। লক্ষণ দেখে আমি আগেই সব প্রস্তুত রেখেছি। কিন্তু হায় হায়, কী দুঃখ । আমাদের স্বর্ণপুরী যেরকম ঐশ্বর্যে ভরে উঠেছিল, এমন কোনোদিন হয় নি, ঠিক এই সময়টাতেই- আচ্ছা যাও, ভেবে দেখছি । [চিকিৎসকের প্রস্থান মোড়লের প্রবেশ মোড়ল । সর্দারমহারাজ, ডেকেছেন ? আমি এও পাড়ার মোড়ল । সর্দার । তুমিই তো তিনশো একুশ ? মোড়ল । প্রভুর কী স্মরণশক্তি । আমার মতো অভাজনকেও ভোলেন না । সর্দার । দেশ থেকে আমার স্ত্রী আসছে । তোমাদের পাড়ার কাছে ডাক বদল হবে, শীঘ্র এখানে পৌঁছিয়ে দেওয়া চাই । মোড়ল । পাড়ায় গোরুর মড়ক, গাড়ি টানবার মতো বলদের অভাব । তা হােক, খোদাইকরদের লাগিয়ে দেওয়া যাবে। সর্দার । কোথায় যেতে হবে জান তো ? বাগানবাড়িতে, যেখানে সর্দারদের ভোজ । মোড়ল । যাচ্ছি, কিন্তু একটা কথা বলে দিয়ে যাই । একটু কান দেবেন । ঐ-যে ৬৯ঙ, লোকে যাকে বিশুপাগল বলে, ওর পাগলামিটাকে শোধন করবার সময় এসেছে।