পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(ł R8 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী সেখানেও কে ডাকিল, “বাবা।” যজ্ঞনাথ সচকিত হইয়া পিছন ফিরিয়া দেখিলেন, বৃন্দাবন । বৃন্দাবন কহিল, “বাবা, সন্ধান পাইলাম আমার ছেলে তোমার ঘরে লুকাইয়া আছে, তাহাকে দাও।” বৃদ্ধ চোখ মুখ বিকৃত করিয়া বৃন্দাবনের উপর ঝুঁকিয়া পড়িয়া বলিল, “তোর ছেলে ?” বৃন্দাবন কহিল, “হা, গোকুল— এখন তাহার নাম নিতাই পাল, আমার নাম দামোদর। কাছাকাছি সর্বত্রই তোমার খ্যাতি আছে, সেইজন্য আমরা লজ্জায় নাম পরিবর্তন করিয়াছি, নহিলে কেহ আমাদের নাম উচ্চারণ कब्रिड भां ।" বৃদ্ধ দশ অঙ্গুলি দ্বারা আকাশ হাতড়াইতে হাতড়াইতে যেন বাতাস আঁকড়িয়া ধরিবার চেষ্টা করিয়া ভূতলে পড়িয়া গেল । চেতনা লাভ করিয়া যজ্ঞনাথ বৃন্দাবনকে মন্দিরে টানিয়া লইয়া গেল । কহিল, ‘কান্না শুনিতে পাইতেছ?” বৃন্দাবন কহিল, “না।” “কান পাতিয়া শোনো দেখি বাবা বলিয়া কেহ ডাকিতেছে ?” বৃন্দাবন কহিল, “না।” বৃদ্ধ তখন যেন ভারি নিশ্চিন্ত হইল। তাহার পর হইতে বৃদ্ধ সকলকে জিজ্ঞাসা করিয়া বেড়ায়, ‘কান্না শুনিতে পাইতেছ ? পাগলামির কথা শুনিয়া সকলেই হাসে । অবশেষে বৎসর চারেক পরে বৃদ্ধের মৃত্যুর দিন উপস্থিত হইল। যখন চোখের উপর হইতে জগতের আলো নিবিয়া আসিল এবং শ্বাস রুদ্ধপ্রায় হইল। তখন বিকারের বেগে সহসা উঠিয়া বসিল ; একবার দুই হস্তে চারি দিক হাতড়াইয়া মুমূর্ষু কহিল, “নিতাই, আমার মইটা কে উঠিয়ে নিলে ?” সেই বায়ুহীন আলোকহীন মহাগহবর হইতে উঠিবার মই খুঁজিয়া না পাইয়া আবার সে ধুপ করিয়া বিছানায় পড়িয়া গেল। সংসারের লুকোচুরি খেলায় যেখানে কাহাকেও খুঁজিয়া পাওয়া যায় না সেইখানে অন্তহিঁত হইল । (* > ミsbr ভূমিকা পরাজিত শা। সুজা ঔরঞ্জীবের ভয়ে পলায়ন করিয়া আরাকান-রাজের আতিথ্য গ্রহণ করেন । সঙ্গে তিন সুন্দরী কন্যা ছিল । আরাকান-রাজের ইচ্ছা হয়, রাজপুত্রদের সহিত তাঁহাদের বিবাহ দেন। সেই প্ৰস্তাবে শা সুজা নিতান্ত অসন্তোষ প্রকাশ করাতে একদিন রাজার আদেশে তাহাকে ছলক্রমে নীেকাযোগে নদীমধ্যে লইয়া নীেকা ডুবাইয়া দিবার চেষ্টা করা হয়। সেই বিপদের সময় কনিষ্ঠা বালিকা আমিনাকে পিতা স্বয়ং নদীমধ্যে নিক্ষেপ করেন। জ্যেষ্ঠা কন্যা আত্মহত্যা করিয়া মরে । এবং সুজার একটি বিশ্বাসী কর্মচারী রহমত ‘আলি জুলিখাকে লইয়া সাতার দিয়া পালায়, এবং সুজা যুদ্ধ করিতে করিতে মরেন । আমিনা খরস্রোতে, প্রবাহিত হইয়া দৈবক্রমে অনতিবিলম্বে এক ধীবরের জালে উদ্ধৃত হয় এবং তাঁহারই গৃহে পালিত হইয়া বড়ো হইয়া উঠে । ইতিমধ্যে বৃদ্ধ রাজার মৃত্যু হইয়াছে এবং যুবরাজ রাজ্যে অভিষিক্ত হইয়াছেন। প্ৰথম পরিচ্ছেদ একদিন সকালে বৃদ্ধ ধীবর আসিয়া আমিনাকে ভৎসনা করিয়া কহিল, “তিন্নি।” ধীবর আরাকান ভাষায় আমিনার নূতন নামকরণ করিয়াছিল— ‘তিন্নি, আজ সকালে তাের হইল কী। কাজকর্মে যে একেবারে হাত