পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(?○8 রবীন্দ্র-রচনাবলী আচ্ছা ডাক্তার মহাশয়, তখনো কি আপনি রোগীর নাড়ী টিপিয়া বেড়াইবেন । হি হি ! হি হি! যদিও মানুষের, বিশেষত পুরুষের, মনটা দৃষ্টিগোচর নয়, তবু আমি শপথ করিয়া বলিতে পারি কথাগুলি ডাক্তারের বুকে শেলের মতো বাজিতেছিল। ‘অনেক রাত্রে লগ্ন। সন্ধ্যাবেলায় ডাক্তার ছাতের উপর বসিয়া দাদার সহিত দুই-এক পাত্র মদ । খাইতেছিলেন । দুইজনেরই এই অভ্যাসটুকু ছিল। ক্রমে আকাশে চাদ উঠিল । আমি দিতে হঠােত অক্সি বললাম, জঙ্গলের দুপিয়া গেলে বািক। আর 6२ माश “এইখানে একটা সামান্য কথা বলা আবশ্যক । ইতিমধ্যে আমি গোপনে ডাক্তারখানায় গিয়া খানিকটা ওঁড়া সংগ্ৰহ করিয়া আনিয়াছিলাম এবং সেই ওঁড়ার কিয়ংদশ সুবিধামত অলক্ষিতে ডাক্তারের গ্লাসে মিশাইয়া দিয়াছিলাম । “কোন গুড়া খাইলে মানুষ মরে ডাক্তারের কাছে শিখিয়ছিলাম। ‘ডাক্তার এক চুমুকে গ্লাসটি শেষ করিয়া কিঞ্চিৎ আর্দ্র গদগদ কণ্ঠে আমার মুখের দিকে মর্মান্তিক দৃষ্টিপাত করিয়া বলিলেন, তবে চলিলাম । “বাঁশি বাজিতে লাগিল, আমি একটি বারাণসী শাড়ি পরিলাম, যতগুলি গহনা সিন্দুকে তোলা ছিল সবগুলি বাহির করিয়া পরিলাম- সিঁথিতে বড়ো করিয়া সিঁদুর দিলাম। আমার সেই বকুলতলায় বিছানা পাতিলাম । ‘বড়ো সুন্দর রাত্রি । ফুটফুটে জ্যোৎস্না। সুপ্ত জগতের ক্লান্তি হরণ করিয়া দক্ষিনেবাতাস বহিতেছে। জুই আর বেল ফুলের গন্ধে সমস্ত বাগান আমোদ করিয়াছে। “বাশির শব্দ যখন ক্ৰমে দূরে চলিয়া গেল, জ্যোৎস্না যখন অন্ধকার হইয়া আসিতে লাগিল, এই তরুপল্লব এবং আকাশ এবং আজন্মকালের ঘর-দুয়ার লইয়া পৃথিবী যখন আমার চারি দিক হইতে মায়ার মতো মিলাইয়া যাইতে লাগিল। তখন আমি নেত্ৰ নিমীলন করিয়া হাসিলাম । “ইচ্ছা ছিল যখন লোকে আসিয়া আমাকে দেখিবে তখন এই হাসিটুকু যেন রঙিন নেশার মতো আমার ঠোটের কাছে লাগিয়া থাকে । ইচ্ছা ছিল যখন আমার অনন্তরাত্রির বাসরঘরে ধীরে ধীরে প্রবেশ করিব তখন এই হাসিটুকু এখান হইতেই মুখে করিয়া লইয়া যাইব । কোথায় বাসরঘর। আমার সে বিবাহের বেশ কোথায় । নিজের ভিতর হইতে একটা খটখটু শব্দে জাগিয়া দেখিলাম, আমাকে লইয়া তিনটি বালক অস্থিবিদ্যা শিখিতেছে। বুকের যেখানে সুখদুঃখ ধুকধুক করিত এবং যৌবনের পাপড়ি প্রতিদিন একটি একটি করিয়া প্রস্ফুটিত হইত। সেইখানে বেত্র নির্দেশ করিয়া কোন অস্থির কী নাম মাস্টার শিখাইতেছে। আর দুঃখে অভিন্ন হস্ট্রিং ওষ্ঠের কাছে ফুটয় বুলিয়ছিলাম তাহার কােন ছি দেখিতে পাইছিল - “গল্পটা কেমন লাগিল ।” আমি বলিলাম, ‘গল্পটি বেশ প্রফুল্পকর।’ এমন সময় প্রথম কাক ডাকিল । জিজ্ঞাসা করিলাম, “এখনো আছ কি ৷” কোনো উত্তর পাইলাম না । ঘরের মধ্যে ভোরের আলো প্ৰবেশ করিল। रागइन >२३०b’