পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

भििक्रकएछन \ხ\9*ა আমি- সে ফুলে ফল ধরে না । ভোগের তরণীর মাঝখানে একটি ছিদ্র আছে, সে ছিদ্র আমি, এই অসত্য আমি- এ তরণী অতৃপ্তিদুঃখের সমুদ্র কখনোই পার হতে পারে না, পথের মধ্যেই সে ডুবিয়ে দেয়। সেইজন্যে শুচিতার সাধনা যারা করেন ভোগের আকাঙক্ষাকে তঁরা প্রশ্ৰয় দেন না । কেননা, এই স্বামিবিমুখ আমির উপকরণ যতই জোগাতে থাকি ততই সে উন্মত্ত হয়ে উঠতে থাকে, ততই তার অতৃপ্তিই তীক্ষ অঙ্কুশাঘাত করে তাকে প্রলয়ের পথে দৌড় করাতে থাকে। এইজন্যে পৃথিবীর সর্বত্রই উচ্চসাধনার একটা প্রধান অঙ্গ ভোগকে খর্ব করা, সুখের ইচ্ছাকে পরিমিত করা। অর্থাৎ, এমন করে চলা যাতে নিজের দিকেই সমস্ত বোঝা বাড়তে বাড়তে সামঞ্জস্য নষ্ট হয়ে সেই দিকটাতেই কত হয়ে না পড়ি । কিন্তু, আমি যার কথা বলছি তিনি ধনমান ত্যাগ করে বৈরাগ্য অবলম্বন করেছেন বলেই যে আমার কাছে এমন মনোহর হয়ে উঠেছিলেন তা নয়। তার মুখ দেখেই বোঝা যেত যেখানে তিনি সত্য সেইখানেই তার মনটি প্রতিষ্ঠিত । তার প্রভুর সঙ্গে মিলনের দ্বারা সর্বদা তিনি সম্পূর্ণ হয়ে আছেন। একটি অলক্ষ্য উপাসনার দ্বারা ভিতরে ভিতরে সর্বদাই তাকে স্নান করিয়ে দিচ্ছে, পরমপবিত্রস্বরূপ স্বামীকে তিনি তার আত্মার মধ্যে বরণ করে নিয়েছেন, এইজন্য সুনিৰ্মল শান্তিময় শুচিতায় তার সমস্ত জীবন দীপ্যমান হয়ে উঠেছে। সত্য র্তাকে পবিত্র করে তুলেছে, বাইরের কোনো নিয়ম নয়। আমরা যখন কেবল নিজেরটি নিয়ে থাকি তখন আমরা আমাদের বড়ো আত্মটির প্রতি বিমুখ হই ; তাতে কেবলই আমাদের সত্যহানি হতে থাকে বলেই তার দ্বারা আমাদের বিকৃতি ঘটে। তাই স্বার্থের জীবন ভোগের জীবন কেবলই মলিনতা দিয়ে আমাদের লিপ্ত করতে থাকে ; এই গ্রানি থেকে ঈশ্বর আমাদের রক্ষা করুন, তিনি আমাদের বাচান । আমার নিজের সেবা। আমার পক্ষে বড়ো লজ্জা, আমার স্বামীর সেবাতেই আমার গৌরব । আমার নিজের সুখের দিকেই যখন আমি নেমে পড়ি তখন আমার বড়ো আমিকে একেবারেই অস্বীকার করি বলেই ভয়ানক ছোটো হয়ে যেতে থাকি ; সেই ছোটো আপনাকে ভরতে গিয়েই আপনাকে যথার্থ ভাবে হারাতে থাকি । মানুষ যে ছোটো নয়, মানুষ যে সেই বড়োর যোগে বড়ো । সেই তার বড়োর আনন্দেই সে আনন্দিত হােক ; সেই তার বড়োর সম্বন্ধেই সে জগতের সকলকে আপনার করে নিক । সেই তার বড়ো আপনাকে হারিয়ে সে বঁাচবে কেমন করে ? আর-কিছুতেই বাঁচতে পারবে না, ধন মান খ্যাতি কিছুতেই না। সত্য না হলে বািচব কী করে । আমি কি আপনাকে দিয়ে আপনাকে পূর্ণ করে তুলতে পারি। হে আমার পরম সত্য, আমি আমার অন্তরে বাহিরে কেবল নিজেকেই আশ্রয় করতে চাচ্ছি। বলে কেবল অসত্যের মধ্যে অশুচি হয়ে ডুবছি- আমার মধ্যে হে মহান, হে পবিত্ৰ, তোমার প্রকাশ হোক, তা হলেই আমি চিরদিনের মতো রক্ষা পাব । হে প্ৰভু, পাহি মাং নিত্যং, পাহি মাং নিত্যম। VENIR YNoya বিশেষত্ব ও বিশ্ব আমার একটি পরম স্নেহাস্পদ ছাত্র আমাকে বলছিলেন : কাল সন্ধ্যাবেলা যখন আমরা ঝড়বৃষ্টিতে মাঠে বেড়াচ্ছিলুম। তখন আমার মনে কেবল এই একটা চিন্তা উঠছিল যে, প্রকৃতির মধ্যে এই-যে এতবড়ো একটা আন্দোলন চলছে আমাকে এ যেন দৃকপাতও করছে না ; আমি যে একটা ব্যক্তি, ও তার কোনো একটা খবরও রাখছে না । আমি তাকে বললুম ; সেইজনেই তো বিশ্বপ্রকৃতির উপরে পৃথিবীসুদ্ধ লোক এমন দৃঢ় করে নির্ভর করতে পারে । যে বিচারক কোনো বিশেষ লোকের উপর বিশেষ করে তাকায় না, তারই বিচারের উপর সর্বসাধারণে আস্থা রাখে । এ উত্তরে আমার ছাত্রটি সন্তুষ্ট হলেন না । তার মনের ভাব এই যে, বিচারকের সঙ্গে তো আমাদের প্রেমের সম্বন্ধ নয়, কাজের সম্বন্ধ। আমার মধ্যে যখন একটি বিশেষত্ব আছে, আমি যখন ব্যক্তিবিশেষ, তখন