পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় Ay a নন্দিনী সেখানকার নয়— মাটির উপরিতলে যেখানে প্ৰাণের যেখানে রূপের নৃত্য, যেখানে প্রেমের লীলা, নন্দিনী সেই সহজ সুখের, সেই সহজ সৌন্দর্যের ।” যাত্রী গ্রন্থে ‘পশ্চিমী-যাত্রীর ডায়ারি অংশে ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯২৪ তারিখে রবীন্দ্ৰনাথ প্রসঙ্গত রক্তকরবী সম্বন্ধে যাহা আলোচনা করিয়াছেন নিম্নে উদধূত হইল : “নারীর ভিতর দিয়ে বিচিত্র রসময় প্রাণের প্রবর্তনা যদি পুরুষের উদ্যমের মধ্যে সঞ্চারিত হবার বাধা পায়, তা হলেই তার সৃষ্টিতে যন্ত্রের প্রাধান্য ঘটে । তখন মানুষ আপনার সৃষ্ট যন্ত্রের আঘাতে এই ভাবটা আমার রক্তকরবী নাটকের মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। যক্ষপুরে পুরুষের প্রবল শক্তি মাটির তলা থেকে সোনার সম্পদ ছিন্ন করে করে আনছে। নিষ্ঠুর সংগ্রহের লুব্ধ চেষ্টার তাড়নায় প্ৰাণের মাধুর্য সেখান থেকে নির্বাসিত । সেখানে জটিলতার জালে আপনাকে আপনি জড়িত করে মানুষ বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন। তাই সে ভুলেছে, সোনার চেয়ে আনন্দের দাম বেশি ; ভুলেছে, প্ৰতাপের মধ্যে পূর্ণতা নেই, প্রেমের মধ্যেই পূর্ণতা । সেখানে মানুষকে দাস করে রাখবার প্রকাণ্ড আয়োজনে মানুষ নিজেকেই নিজে বন্দী করেছে। এমন সময়ে সেখানে নারী এল, নন্দিনী এল ; প্রাণের বেগ এসে পড়ল। যন্ত্রের উপর, প্রেমের আবেগ আঘাত করতে লাগল লুব্ধ দুশ্চেষ্টার বন্ধনজালকে । তখন সেই নারীশক্তির নিগৃঢ় প্রবর্তনায় কী করে পুরুষ নিজের রচিত কারাগারকে ভেঙে ফেলে প্ৰাণের প্রবাহকে বাধামুক্ত করবার চেষ্টায় প্ৰবৃত্ত হল, এই নাটকে তাই বর্ণিত আছে।” চিরকুমার-সভা চিরকুমার-সভা উপন্যাস আকারে ভারতী পত্রে (১৩০৭ বৈশাখ - ১৩০৮ জ্যৈষ্ঠ) ধারাবাহিক প্ৰকাশিত হয় । পরে ইহা ১৩১১ সালে প্ৰকাশিত রবীন্দ্ৰ-গ্ৰন্থাবলীর (হিতবাদীর উপহার) ‘রঙ্গচিত্ৰ বিভাগের অন্তর্গত হয় এবং “প্রজাপতির নির্বন্ধ' নাম লইয়া ১৩১৪ সালে স্বতন্ত্র পুস্তকরূপে (গদ্যগ্রন্থাবলী ৮) প্রকাশিত হয় । “প্রজাপতির নির্বন্ধ রবীন্দ্র-রচনাবলীর চতুর্থ খণ্ডে (সুলভ সংস্করণ দ্বিতীয় খণ্ডে) উপন্যাস ও গল্প বিভাগে মুদ্রিত হইয়াছে। গ্ৰন্থখানির কোনো কোনো অংশ পরিবর্তন করিয়া এবং কিছু নুতন-লিখিত অংশ যোগ করিয়া রবীন্দ্রনাথ ১৩৩১ সালের চৈত্র মাসে বা ১৩৩২ সালের বৈশাখ মাসে একখানি নাটক রচনা করেন ; অনেকগুলি নুতন গানও ইহাতে যোগ করেন । নাটকটি “চিরকুমার-সভা’ নামে ১৩৩২ সালের চৈত্র মাসে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ; ইহাই বর্তমান খণ্ডে মুদ্রিত হইল। “প্রজাপতির নির্বন্ধ উপন্যাসটি আর প্ৰচলিত না থাকায়, “প্রজাপতির নির্বন্ধ হইতে বর্ণনাংশও অনেকখানি এই নাটকে সংকলিত হয় । রবীন্দ্র-রচনাবলীতে “প্রজাপতির নির্বন্ধ ইতিপূর্বেই প্রকাশিত হইয়াছে বলিয়া, রচনাবলী-সংস্করণে চিরকুমার-সভা হইতে উক্ত বৰ্ণনাংশ বর্জিত হইয়াছে ; শুধু যে-সকল অংশ অভিনয়-নির্দেশক সেগুলি রক্ষিত হইল । চিরকুমার-সভা সম্বন্ধে প্রিয়নাথ সেনকে লিখিত রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি পত্রাংশ নিম্নে সংকলিত হইল আমি নানাপ্রকার ছুতোর নানাপ্রকার কুঁড়েমি করে অবশেষে কাল বৈকালে চিরকুমার সভায় হস্তক্ষেপ করেছি- আজ বৈকালে সমাধা করার আশা করচি। অবশ্য চিরসমাধা নয়- কেবল আশ্বিনের কিস্তি ।- ২৮শে শ্রাবণ [ ১৩০৭] —চিঠিপত্র ৮ । পৃ ১১৮ চন্দ্ৰীমাধববাবুর চরিত্রে অনেক মিশল আছে, তার মধ্যে কতক মেজদাদা কতক রাজনারায়ণ বাবু এবং কতক আমার কল্পনা আছে । নিৰ্ম্মলাও তথৈবচ- এর মধ্যে সরলার অংশ অনেকটা আছে