পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ត្រូម៉ូស្គូ সম্পাদক আমার স্ত্রী-বর্তমানে প্রভা সম্বন্ধে আমার কোনো চিন্তা ছিল না । তখন প্রভা অপেক্ষা প্রভার মাতাকে লইয়া কিছু অধিক ব্যস্ত ছিলাম। তখন কেবল প্রভার খেলাটুকু হাসিটুকু দেখিয়া, তাহার আধো আধো কথা শুনিয়া এবং আদরটুকু লইয়াই তৃপ্ত থাকিতাম ; যতক্ষণ ভালো লাগিত নাড়াচাড়া করিতাম, কান্না আরম্ভ করিলেই তাহার মার কোলে সমৰ্পণ করিয়া সত্বর অব্যাহতি লইতাম । তাহাকে যে বহু চিস্তা ও চেষ্টায় মানুষ করিয়া তুলিতে হইবে, এ-কথা আমার মনে আসে নাই । অবশেষে অকালে আমার স্ত্রীর মৃত্যু হইলে একদিন মায়ের কোল হইতে খসিয়া মেয়েটি আমার কোলের কাছে আসিয়া পড়িল, তাহাকে বুকে টানিয়া লইলাম। : কিন্তু মাতৃহীন জুহিতাকে দ্বিগুণ স্নেহে পালন করা আমার কর্তব্য এটা আমি বেশি । চিন্তা করিয়াছিলাম, নী, পত্নীহীন পিতাকে পরম যত্বে রক্ষা করা তাহার কর্তব্য এইটে সে বেশি অনুভব করিয়াছিল, আমি ঠিক বুঝিতে পারি না। কিন্তু ছয় বৎসর বয়স হইতেই সে গিল্পীপনা আরম্ভ করিয়াছিল। বেশ দেখা গেল ওইটুকু মেয়ে তাহার বাবার একমাত্র অভিভাবক হুইবার চেষ্টা করিতেছে। আমি মনে মনে হাসিয়া তাহার হস্তে আত্মসমপণ করিলাম। দেখিলাম যতই আমি অকৰ্মণ্য অসহায় হই ততই তাহার লাগে ভালো ; দেখিলাম, আমি নিজে কাপড়টা ছাতাটা পাড়িয়া লইলে সে এমন ভাব ধারণ করে, যেন তাহার অধিকারে হস্তক্ষেপ কর। হইতেছে। বাবার মতো এতবড়ো পুতুল সে ইতিপূর্বে কখনো পায় নাই, এইজন্ত বাবাকে খাওয়াইয়া পরাইয়া বিছানায় গুয়াইয়া সে সমস্ত দিন বড়ো আনন্দে আছে । কেবল ধারাপাত এবং পশুপাঠ প্রথমভাগ অধ্যাপনের সময় আমার পিতৃত্বকে কিঞ্চিৎ ৷ সচেতন করিয়া তুলিতে হইত। কিন্তু মাঝে মাঝে ভাবনা হইত মেয়েটিকে সৎপাত্রে বিবাহ দিতে হইলে অনেক অর্থের আবগুক—আমার এত টাকা কোথায় । মেয়েকে তো সাধ্যমতো লেখাপড় শিখাইতেছি কিন্তু একটা পরিপূর্ণ মুখের হাতে পড়িলে তাহার কী দশা হইবে।