পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ 甲 २४¢ আর কোনো জবরদস্তি করিল না,—কিন্তু বড়ে অশাস্তিতে বাস করিতে লাগিল । তাহার এই চঞ্চল যুবতী স্ত্রীর প্রতি সদাশঙ্কিত ভালোবাসা উগ্র একটা বেদনার মতো বিষম টনটনে হইয়া উঠিল। এমন কি, এক-একবার মনে হইত এ যদি মরিয়া যায় তবে আমি নিশ্চিন্তু হইয়া একটুখানি শান্তিলাভ করিতে পারি।- মানুষের উপরে মানুষের যতটা ঈর্ষ হয় যমের উপরে এতটা নহে। এমন সময় ঘরে সেই বিপদ ঘটিল। চন্দরাকে যখন তাহার স্বামী খুন স্বীকার করিয়া লইতে কহিল, সে স্তম্ভিত হইয়া চাহিয়া রহিল ; তাহার কালে দুটি চক্ষু কালো অগ্নির স্তায় নীরবে তাহার স্বামীকে দপ্ত করিতে লাগিল। তাহার সমস্ত শরীর মন যেন ক্রমেই সংকুচিত হইয়া স্বামীরাক্ষসের হাত হইতে বাহির হইয়া আসিবার চেষ্টা করিতে লাগিল । তাহার সমস্ত অন্তরাত্মা একান্ত বিমুখ হইয়া দাড়াইল । ছিদাম আশ্বাস দিল, “তোমার কিছু ভয় নাই।” বলিয়া পুলিসের কাছে ম্যাজিস্টেটের কাছে কী বলিতে হইবে বারবার শিখাইয়া দিল । চন্দরা সে সমস্ত দীর্ঘ কাহিনী কিছুই শুনিল না, কাঠের মূর্তি হইয়া বসিয়া রহিল। সমস্ত কাজেই ছিদামের উপর দুখিরামের একমাত্র নির্ভর। ছিদাম যখন চন্দরার উপর দোষারোপ করিতে বলিল, দুখি বলিল, “তাহা হইলে বউমার কী হইবে।” ছিদাম কহিল, “উহাকে আমি বঁাচাইয়া দিব।” বৃহৎকায় দুখিরাম নিশ্চিন্ত হইল। তৃতীয় পরিচ্ছেদ ছিদাম তাহার স্ত্রীকে শিখাইয়া দিয়াছিল যে, তুই বলিস বড়ো জা আমাকে বট লইয়া মারিতে আসিয়াছিল, আমি তাহাকে দা লইয়া ঠেকাইতে গিয়া হঠাৎ কেমন করিয়া লাগিয়া গিয়াছে। এ-সমস্তই রামলোচনের রচিত। ইহার অনুকূলে ষে ষে অলংকার এবং প্রমাণ প্রয়োগের আবশুক তাহাও সে বিস্তারিতভাবে ছিদামকে শিখাইয়াছিল। 亨 পুলিস আসিয়া তদন্ত করিতে লাগিল। চন্দ্ররাই যে তাহার বড়ো জাকে খুন করিয়াছে গ্রামের সকল লোকের মনে এই বিশ্বাস বদ্ধমূল হইয়া গিয়াছে। সকল সাক্ষীর দ্বারাই সেইরূপ প্রমাণ হইল। পুলিস যখন চন্দরাকে প্রশ্ন করিল, চন্দরা কহিল, “ই আমি খুন করিয়াছি।” কেন খুন করিয়াছ। আমি তাহাকে দেখিতে পারিতাম না ।