পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२5o e #1 রবীন্দ্র-রচনাবলী দাড়াইয়াছে তখন হঠাৎ দল ভাঙিয়। পলায়ন করা তাহাকে শোভা পায় না। অদৃষ্ট সুবিবেচনাপূর্বক প্রাণিগণকে যথাসাধ্য কর্মে নিয়োগ করেন না, কিন্তু তথাপি নিযুক্ত কাৰ দৃঢ় নিষ্ঠার সহিত সম্পন্ন করা মানুষের কর্তব্য। তোমরা আবশ্বক বোধ করিলে আমার নিকট আসিয়া থাক, এবং সম্মান দেখাইতেও ক্রটি কর না। আবগুক অতীত হইয়া গেলে সেবকাধমের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করিয়া কিছু আত্মগৌরব অনুভব করিবারও চেষ্টা করিয়া থাক। পৃথিবীতে সাধারণত ইহাই স্বাভাবিক এবং এই কারণেই “সাধারণ” নামক একটি অকৃতজ্ঞ অব্যবস্থিতচিত্ত রাজাকে তাহার অনুচরবর্গ সম্পূর্ণ বিশ্বাস করে না কিন্তু অনুগ্রহনিগ্রহের দিকে তাকাইলে সকল সময় কাজ করা হইয়া উঠে না । নিরপেক্ষ হইয়া কাজ না করিলে কাজের গৌরব আর থাকে না । অতএব যদি কিছু শুনিতে ইচ্ছা করিয়া আসিয়া থাক তো কিছু শুনাইব । শ্রা মানিব না এবং উৎসাহেরও প্রত্যাশা করিব না । * o আজ কিন্তু অতি ক্ষুদ্র এবং পৃথিবীর অত্যন্ত পুরাতন একটি গল্প মনে পড়িতেছে। মনোহর না হইলেও সংক্ষেপবশত শুনিতে ধৈর্ধচু্যতি না হইবার সম্ভাবনা । পৃথিবীর একটি মহানদীর তীরে একটি মহারণ্য ছিল । সেই অরণ্যে এবং সেই নদীতীরে এক কাঠঠোকরা এবং একটি কাদাখোঁচা পক্ষী বাস করিত। ধরাতলে কীট যখন মুলত ছিল তখন ক্ষুধানিবৃত্তিপূর্বক সন্তুষ্টচিত্তে উভয়ে ধরাধামের যশোকীর্তন করিয়া পুষ্টকলেবরে বিচরণ করিত। 勃 কালক্রমে দৈবযোগে পৃথিবীতে কীট দুষ্প্রাপ্য হইয়া উঠিল। তখন নদীতীরস্থ কাদার্থোচ শাখাসীন কাঠঠোকরাকে কহিল, “ভাই কাঠঠোকরা, বাহির হইতে অনেকের নিকট এই পৃথিবী নবীন শুামল সুন্দর বলিয়া মনে হয় কিন্তু আমি দেখিতেছি ইহা আদ্যোপাস্ত জীর্ণ।” * শাখাসীন কাঠঠোকর নদীতটস্থ কাদাখোচাকে বলিল, “ভাই কাদাখোঁচা, অনেকে .এই অরণ্যকে সতেজ শোভন বলিয়া বিশ্বাস করে, কিন্তু আমি বলিতেছি ইহা একেবারে অস্তঃস্নারবিহীন ।” তখন উভয়ে মিলিয়া তাহাই প্রমাণ করিয়া দিতে কৃতসংকল্প হইল। কাদাখোঁচ নদীতীরে লম্ফ দিয়া, পৃথিবীর কোমল কদমে অনবরতই চঞ্চু বিদ্ধ করিয়া বহুদ্বার জীর্ণতা নির্দেশ করিতে লাগিল এবং কাঠঠোকরা বনস্পতির কঠিন শাখায় বারংবার চষ্ণু আঘাত করিয়া অরণ্যের অন্তঃপূন্তত প্রচার করিতে প্রবৃত্ত হইল। ।