পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԾՓb- রবীন্দ্র-রচনাবলী কোনো বিশেষরূপ আপনাকে চরমভাবে বদ্ধ করে না—যদি করিত তবে সে শমতের প্রকাশকে বাধা দিত । 亨 তাই র্যাহারা অনন্তের সাধনা করেন, যাহারা সত্যকে উপলব্ধি করিতে চান, র্তাহাদিগকে বারবার একথা চিন্তা করিতে হয়, চারিদিকে যাহা কিছু দেখিতেছি জানিতেছি ইহাই চরম নহে, স্বতন্ত্র নহে, কোনো মুহূর্তেই ইহা আপনাকে আপনি পূর্ণ করিয়া প্রকাশ করিতেছে না । যদি তাহা করিত তবে ইহার প্রত্যেকে স্বয়ষ্ণু স্বপ্রকাশ হইয়া স্থির হইয়া থাকিত । ইহারা অন্তহীন গতি দ্বারা যে অন্তহীন স্থিতিকে নির্দেশ করিতেছে সেইখানেই আমাদের চিত্তের চরম আশ্রয় চরম আনন্দ । অতএব আধ্যাত্মিক সাধনা কখনোই রূপের সাধন হইতে পারে না । তাহ সমস্ত রূপের ভিতর দিয়া চঞ্চল রূপের বন্ধন অতিক্রম করিয়া ধ্রুব সত্যের দিকে চলিতে চেষ্টা করে । ইন্দ্রিয়গোচর যে কোনো বস্তু আপনাকেই চরম বলিয়া স্বতন্ত্র বলিয়া ভান করিতেছে, সাধক তাহার সেই ভানের আবরণ ভেদ করিয়া পরম পদার্থকে দেখিতে চায়। ভেদ করিতেই পারিত না যদি এই সমস্ত নাম রূপের আবরণ চিরন্তন হইত। যদি ইহারা অবিশ্রাম প্রবহমান ভাবে নিয়তই আপনার বেড়া আপনিই ভাঙিয়া না চলিত তবে ইহারা ছাড়া আর কিছুর জন্য কোনো চিন্তাও মানুষের মনে মুহূর্তকালের জন্য স্থান পাইত না তবে ইহাদিগকেই সত্য জানিয়া আমরা নিশ্চিস্ত হুইয়া বসিয়া থাকিতাম—তবে বিজ্ঞান ও তত্ত্বজ্ঞান এই সমস্ত আচল প্রত্যক্ষ সত্যের ভীষণ শৃঙ্খলে বাধা পড়িয়া একেবারে মূক হইয়া মূৰ্ছিত হইয়া থাকিত। ইহার পিছনে কিছুই দেখিতে পাইত না । কিন্তু সমস্ত খণ্ড রস্তু কেবলই চলিতেছে বলিয়াই, সারি সারি দাড়াইয়া পথ রোধ করিয়া নাই বলিয়াই আমরা অধও সত্যের, অক্ষয় পুরুষের সন্ধান পাইতেছি। সেই সত্যকে জানিয়া সেই পুরুষের কাছেই আপনার সমস্তকে নিবেদন করিয়া দেওয়াই আধ্যাত্মিক সাধনা। সুতরাং তাহা সত্যের দিক হইতে রূপের দিকে কোনো মতে উজান পথে চলিতে পারে না । এই তো আধ্যাত্মিক সাধনা। শিল্প-সাহিত্যের সাধনাটা কী ? এই সাধনায় মানুষের চিত্ত আপনাকে বাহিরে রূপ দিয়া সেই রূপের ভিতর হইতে পুনশ্চ আপনাকেই ফিরিয়া দেখিতেছে । ു. সৌন্দর্বের মধ্যে আনন্দ আপনাকেই বাহিরে দেখিতে পায় - সেইজন্যই সৌন্দর্ষের গৌরব। মাস্থ্য আপনার সৌন্দৰ-স্বষ্টির মধ্যে আপনারই আনন্দময় স্বরূপকে দেখিতে পায়—শিল্পীর শিল্পে কবির কাব্যে মানুষের সেইজন্তই এত অনুরাগ। শিল্পে সাহিত্যে মানুষ কেবলই যদি বাহিরের রূপকেই দেখিত আপনাকে না দেখিত অবে সে শিল্প-সাহিত্য তাহার পক্ষে একেবারে ব্যর্থ হইত। .