পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপস্থিত হয়-পূর্বেকার সমস্ত খাত মিলাইয়া যাহার কোনো প্রকার হিসাব পাওয়া যায় না । কেমন করিয়া পাইবে ? স্বার্থের প্রয়োজনের হিসাবের সঙ্গে আত্মার আনন্দের হিসাব কোনোমতেই মেলানো যায় না—কেননা সেই যথার্থ আপনার মধ্যে গিয়া পৌঁছিলে মানুষ হঠাৎ দেখিতে পায়, খরচই সেখানে জম, দুঃখই সেখানে মুখ । এমনি করিয়া মাঝে মাঝে মানুষ এমন একটি আপনাকে দেখিতে পায়, বাহিরের সমস্তের চেয়ে ষে বড়ে । কেন বড়ো ? কেননা সে আপনার মধ্যেই আপনি সমাপ্ত । তাহাতে শুনিতে হয় না, মাপিতে হয় না—সমস্ত গন এবং মাপা তাহা হইতেই আরম্ভ এবং তাহাতে আসিয়াই শেষ হয়। ক্ষতি তাহার কাছে ক্ষতি নহে, মৃত্যু তাহার কাছে মৃত্যু নহে, ভয় তাহার বাহিরে এবং দুঃখের আঘাত তাহার তারে আনন্দের মুর বাজাইয়া তোলে । এই ষাহাকে মানুষ ক্ষণে ক্ষণে কিছু কিছু করিয়া পায়—যাহাকে কখনো কখনো কোনো একটা দিক দিয়া সে পায়—যাহাকে পাইবামাত্র তাহার শক্তি স্বাভাবিক হয়, দুঃসাধ্য মুসাধ্য হয়, তাহার কর্ম আনন্দের কর্ম হইয়া উঠে ; যাহাকে পাইলে তাহার উপর হইতে বাহিরের সমস্ত চাপ যেন সরিয়া যায়, সে আপনার মধ্যেই আপনার একটি পর্যাপ্তি দেখিতে পায় তাহার মধ্যেই মানুষ আপনার সত্য পরিচয় উপলব্ধি করে। সেই উপলব্ধি মানুষের মধ্যে অন্তরতমভাবে আছে বলিয়াই প্রবৃত্তির দ্বারা চালিত হইয়া প্রকৃতির প্রেরণায় সে যে সকল কাজ করে সে কাজকে সে গারদের কাজ বলে। অথচ প্রকৃতি ষে নিতান্তই জবরদস্তি করিয়া বেগার খাটাইয় লয় তাহা নহে – সে আপনার কাজ উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে বেতনটিও শোধ করে, প্রত্যেক চরিতার্থতার সঙ্গে সঙ্গে কিছু কিছু মুখও বঁটিয়া দেয়। সেই মুখের বেতনটির প্রলোভনে আমরা অনেক সময় ছুটির পরেও খাটিয়া থাকি, পেট ভরিলেও খাইতে ছাড়ি না । কিন্তু হাজার হইলে তবু মাহিনী খাইয়া খাটুনিকেও আমরা দাসত্ব বলি—আমরা এ চাকরি ছাড়িতেও পারি না তৰু বলি হাড় মাটি হইল, ছাড়িতে পারিলে বাচি । সংসারে এই যে আমরা খাটি-সকল দুঃখ সত্বেও ইহার মাহিনী পাই—ইহাতে মুখ আছে, লোভ আছে। তবু মানুষের প্রাণ রহিয়া রহিয়া কাদিয়া উঠে এবং বলে – ভার, কোন অপরাধে দীর্ঘ মোনে नरनांब्रजांब्रcष थांकि बन् । এমন কথা সে যে বলে, বেতন খাইয়াও তাহার যে পুরা সুখ নাই তাহার কারণ এই যে, সে জানে তাহার মধ্যে প্রভূত্বের একটি স্বাধীন সম্পদ আছে—সে জন্মদাস নছে— সমস্ত প্রলোভনসত্ত্বেও দাসত্ব তাহার পক্ষে স্বাভাবিক নয়-প্রকৃতির দাসত্বে তাহার