পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 e \ . রবীন্দ্র-রচনাবলী তাহার উত্তর কোথাও নাই—কেবল বিভীষিকার তাড়নায় এবং কাল্পনিক প্রলোভনের ব্যৰ্থ আশ্বাসে তাহাকে চালনা করিয়া যাইতেছে ; চারিদিক হইতেই আকাশে তর্জনী উঠিতেছে এবং এই আদেশ নানা পক্লষকণ্ঠে ধ্বনিত হইতেছে, যাহা বলিতেছি তাহাই মানিয়া যাও, কেননা তুমি মূঢ় তুমি বুঝিবে না ; যাহা পাঁচজনে করিতেছে তাহাই করিয়া যাও, কেননা তুমি অক্ষম ; সহস্ৰ বংসরের পূর্ববর্তীকালের সহিত তোমাকে আপাদমস্তক শতসহস্ৰ স্বত্রে একেবারে বাধিয়া রাখিয়াছি, কেননা নূতন করিয়া নিজের কল্যাণচিন্তা করিবার শক্তিমাত্র তোমার নাই। নিষেধজর্জরিত চিরকাপুরুষ নির্মাণ করিবার এত বড়ো সর্বদেশব্যাপী ভয়ংকর লৌহযন্ত্র ইতিহাসে আর কোথাও কি কেহ স্বাক্ট করিয়াছে—এবং সেই মছুষ্যত্ব চুৰ্ণ করিবার যন্ত্রকে আর কোনো দেশে কি ধর্মের পবিত্র উপাধিতে আখ্যাত করা হইয়াছে ? দুৰ্গতি তো প্রত্যক্ষ, আর তো কোনো যুক্তির প্রয়োজন দেখি না, কিন্তু সেই প্রত্যক্ষকে চোখ মেলিয়া দেখিব না, চোখ বুজিয়া কি কেবল তর্কই করিব। আমাদের দেশে ব্রহ্মের ধ্যানে পূজাৰ্চনায় যে বহুবিচিত্র স্থূলতার প্রচার হইয়াছে তর্ককালে তাহাকে আমরা চরম বলিয়া মানি না। আমরা বলিয়া থাকি, ষে মানুষ আধ্যাত্মিকতার ষে অবস্থায় আছে এ দেশে তাহার জন্ত সেই প্রকার আশ্রয় গড়িয়া দেওয়া হইয়াছে ; এইরূপে প্রত্যেকে নিজ নিজ আশ্রয়ে থাকিয়া ক্রমশ স্বতই উচ্চতর অবস্থার জন্ত প্রস্তুত হইতেছে। কিন্তু জানিতে চাই অনস্ত কালের অসংখ্য মানুষের প্রত্যেক ভিন্ন ভিন্ন অবস্থার জন্য সেরূপ উপযুক্ত আশ্রয় গড়িতে পারে এমন সাধ্য কাহার ! সমস্ত বিচিত্রতাকেই স্থান দিবে, বাধা দিবে না, এতবড়ো বিশ্বকৰ্ম মানবসমাজে কে আছে ? বস্তুত মামুষের অসীম বৈচিত্র্যকে যাহারা সত্যই মানে তাহারা মানুষের জন্ত অসীম স্থানকেই ছাড়িয়া রাখে। ক্ষেত্র যেখানে মুক্ত, বৈচিত্র্য সেখানে আপনি অবাধে আপনাকে প্রকাশ করিতে পারে। এই জন্তই যে-সমাজে জাগ্রত ও নিজিতকালের সমস্ত ব্যাপারই একেবারে পাকা করিয়া বাধা সেখানে মানুষের চরিত্র আপন স্বাতন্ত্র্যে দৃঢ় হইয়া উঠিতে পারে না, সকলেই একছাচে গড় নিজাব ভালোমাস্থ্যটি হইয়া থাকে। আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রেও সে কথা খাটে । মানুষের সমস্ত চিন্তাকে কল্পনাকে পর্যন্ড যদি অবিচলিত স্থূল আকারে একেবারে বাধিয়া ফেলা যায়, যদি তাহাকে বলা যায় অসীমকে তুমি কেবল এই একটিমাত্র বা কয়টিমাত্র বিশেষ রূপেই চিন্তা করিতে থাকে। তবে সেই উপায়ে সত্যই কি মানুষের স্বাভাবিক বৈচিত্ৰ্যকে আশ্রয় দেওয়া হয়, তাহার চিরধাবমান পরিণতিপ্রবাহকে সাহায্য করা হয় ? ইহাতে তাহার আধ্যাত্মিক বিকাশকে কি বদ্ধ