পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Հ8 রবীন্দ্র-রচনাবলী । গোল হইয়া সুসম্পূর্ণ হইতে পারিয়াছে। সোজা লাইনের সমাপ্তিহীনতা, সোজ লাইনের অতি তীব্র তীক্ষ কৃশতা বিশ্বপ্রকৃতির নহে; গোল আকারের সুন্দর পরিপুষ্ট পরিসমাপ্তিই বিশ্বের স্বভাবগত। -এই এক শক্তির একাগ্র সোজা রেখায় স্বষ্টি হয় না— তাহা কেবল ভেদ করিতে পারে, কিন্তু কোনো কিছুকেই ধরিতে পারে না, বেড়িতে পারে না, তাহা একেবারে রিক্ত, তাহ প্রলয়েরই রেখা ; রুত্রের প্রলয়পিনাকের মতো তাহাতে কেবল একই মুর, তাহাতে সংগীত নাই ; এই জন্য শক্তি একক হইয়া উঠিলেই তাহ বিনাশের কারণ হইয়া উঠে। দুই শক্তির যোগেই বিশ্বের যত কিছু ছন্দ । আমাদের এই জগৎকাব্য মিত্রাক্ষর-পদে পদে তাহার জুড়িজুড়ি মিল। Q বিশ্বপ্রকৃতির মধ্যে এই ছন্দটি যত স্পষ্ট এবং বাধাহীন, মানবপ্রকৃতির মধ্যে তেমন নহে। সেখানেও এই সংকোচন ও প্রসারণের তত্ত্বটি আছে—কিন্তু তাহার সামঞ্জস্তটিকে আমরা সহজে রাখিতে পারি না । বিশ্বের গানে তালটি সহজ, মানুষের গানে তালটি বহু সাধনার সামগ্রী । আমরা অনেক সময়ে দ্বন্দ্বের এক প্রাস্তে আসিয়া এমনি ঝুঁকিয়া পড়ি যে অন্য প্রান্তে ফিরিতে বিলম্ব হয় তখন তাল কাটিয়া যায়, প্রাণপণে ক্রট সারিয়া লইতে গলদঘর্ম হইয়া উঠিতে হয়। একদিকে আত্ম একদিকে পর, একদিকে অর্জন একদিকে বর্জন, একদিকে সংযম একদিকে স্বাধীনতা, একদিকে আচার একদিকে বিচার মানুষকে টানিতেছে ; এই দুই টানার তাল বঁাচাইয়া সমে আসিয়া পৌছিতে শেখাই মনুষ্যত্বের শিক্ষা ; এই তাল-অভ্যাসের ইতিহাসই মানুষের ইতিহাস। ভারতবর্ষে সেই তালের সাধনার ছবিটিকে স্পষ্ট করিয়া দেখিবার সুযোগ আছে । গ্রীস রোম ব্যাবিলন প্রভৃতি সমস্ত পুরাতন মহাসভ্যতার গোড়াতেই একটা জাতিসংঘাত আছে। এই জাতিসংঘাতের বেগেই মানুষ পরের ভিতর দিয়া আপনার ভিতরে পুরামাত্রায় জাগিয়া উঠে। এইরূপ সংঘাতেই মানুষ রূঢ়িক হইতে যৌগিক বিকাশ লাভ করে এবং তাহাকেই বলে সভ্যতা । পর্দ উঠিবামাত্র ভারতবর্ষের ইতিহাসের প্রথমাঙ্কেই আমরা আর্য-অনার্যের প্রচণ্ড জাতিসংঘাত দেখিতে পাই। এই সংঘাতের প্রথম প্রবলবেগে অনার্ষের প্রতি আর্ষের যে বিদ্বেষ জাগিয়াছিল তাহারই ধাক্কায় আর্ষের নিজের মধ্যে নিজে সংহত হইতে পারিল । 奪 o এইরূপ সংহত হইবার অপেক্ষ ছিল। কারণ, ভারতবর্বে আর্ষের কালে কালে ও দলে দলে প্রবেশ করিতেছিলেন । র্তাহীদের সকলেরই গোত্র, দেবতা ও মন্ত্র যে একই ছিল তাহী নহে। বাহির হইতে যদি একটা প্রবল আঘাত তাহাদিগকে বাধা না দিত তবে এই আৰ উপনিবেশ দেখিতে দেখিতে নানা শাখা প্রতিশাখায় সম্পূর্ণ বিভক্ত হইয়।