পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিচয় 8&Q নছে তিনি শক্রকে আপন করিয়াছিলেন । তিনি অচিারের নিষেধকে, সামাজিক বিদ্বেষের বাধাকে অতিক্রম করিয়াছিলেন ; তিনি আর্ব অনার্ধের মধ্যে প্রীতির সেতু বন্ধন করিয়া দিয়াছিলেন.। 啤 নৃতত্ব আলোচনা করিলে দেখা যায় বর্বর জাতির অনেকেরই মধ্যে এক একটি বিশেষ জন্তু পবিত্র বলিয়া পূজিত হয়। অনেক সময়ে তাহারা আপনাদিগকে সেই জন্তুর বংশধর বলিয়া গণ্য করে। সেই জন্তুর নামেই তাহারা আখ্যাত হুইয়া থাকে। ভারতবর্ষে এইরূপে নাগবংশের পরিচয় পাওয়া যায়। কিষ্কিন্ধ্যায় রামচন্দ্র ষে অনাৰ্বদলকে বশ করিয়াছিলেন তাহারাও যে এইরূপ কারণেই বানর বলিয়া পরিচিত তাহাতে সন্দেহ নাই। কেবল তো বানর নছে রামচন্দ্রের দলে ভল্লুকও ছিল । বানর যদি অবজ্ঞাস্বচক আখ্যা হইত তবে ভল্লুকের কোনো অর্থ পাওয়া যায় না । , রামচন্দ্র এই যে বানরদিগকে বশ করিয়াছিলেন তাহ রাজনীতির দ্বারা নহে, ভক্তিধর্মের দ্বারা। . এইরূপে তিনি হকুমানের ভক্তি পাইয়া দেবত হইয়া উঠিয়াছিলেন। পৃথিবীর সর্বত্রই দেখা যায়, যে-কোনো মহাত্মাই বাহুধর্মের স্থলে ভক্তিধর্মকে জাগাইয়াছেন তিনি স্বয়ং পূজা লাভ করিয়াছেন । শ্ৰীকৃষ্ণ, খ্ৰীস্ট, মহম্মদ, চৈতন্য প্রভৃতি তাহার অনেক দৃষ্টান্ত আছে। শিখ, মুকি, কবিরপন্থী প্রভৃতি সর্বত্রই দেখিতে পাই, ভক্তি যাহাদিগকে আশ্রয় করির প্রকাশ পায় অম্বুবতীদের কাছে তাহার দেবত্ব প্রাপ্ত হন। ভগবানের সহিত ভক্তের অন্তরতম যোগ উদঘাটন করিতে গিয়া তাহারাও যেন দেবত্বের সহিত মনুষ্যত্বের ভেদলীম৷ অতিক্রম করিয়া থাকেন। এইরূপে হকুমান ও বিভীষণ রামচন্দ্রের উপাসক ও ভক্ত বৈষ্ণবরূপে খ্যাত হইয়াছেন। *-* 靜 রামচন্দ্র ধর্মের দ্বারাই অনার্বদিগকে জয় করিয়া তাহদের ভক্তি অধিকার করিয়াছিলেন। তিনি বাহুবলে তাহাদিগকে পরাস্ত করিয়া রাজ্যবিস্তার করেন নাই । দক্ষিণে তিনি কৃষিস্থিত্তিমূলক সভ্যতা ও ভক্তিমূলক একেশ্বরবাদ প্রচার করিয়াছিলেন। তিনি সেই ষে বীজ রোপণ করিয়া আসিয়াছিলেন বহু শতাৰী পরেও ভারতবর্ষ তাহার ফল লাভ করিয়াছিল। এই দাক্ষিণাত্যে ক্রমে দারুণ শৈবধর্মও ভক্তিধর্মের রূপ গ্রহণ করিল এবং একদা এই দাক্ষিণাত্য হইতেই ব্রহ্মবিস্তার এক ধারায় ভক্তিস্রোত ও আরএক ধারায় অদ্বৈতজ্ঞান উচ্ছসিত হইয়া সমস্ত ভারতবর্ধকে প্লাবিত করিয়া ছিল। আমরা আর্বদের ইতিহাসে সংকোচ ও প্রসারণের এই একটি রূপ দেখিলাম। মানুষের একদিকে তাহার বিশেষত্ব আর একদিকে তাছার বিশ্বস্তু এই দুই দিকের টানই ভারতবর্ষে যেমন করিয়া কাজ করিয়াছে তাহা যদি আমরা আলোচনা করিয়া না দেখি তবে ভারতবর্ধকে আমরা চিনিতেই পারিব না। একদিন অহার এই আত্মরক্ষণ শক্তির দিকে