পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

84૭ தும் রবীক্স-রচনাবলী তাহাই ষে তাহার নিত্য লক্ষণ তাহা কখনোই সত্য নহে। এ সম্বন্ধে বৈদিককাল হইতে অদ্য পর্যস্তের ইতিহাস হইতে নজির সংগ্ৰহ করিয়া পাণ্ডিত্যের অবতারণা করিতে ইচ্ছাই করি না। আমি একটা সাধারণতত্ত্বস্বরূপেই বলিতে চাই, কোনো বিশেষ ধর্মমত ও কোনো বিশেষ আচার কোনো জাতির নিত্য লক্ষণ হইতেই পারে না । হাসের পক্ষে জলে সাতার যেমন, মানুষের পক্ষে বিশেষ ধর্মমত কখনোই সেরূপ নহে। ধর্মমত জড় পদার্থ নহে-মানুষের বিষ্ঠাবুদ্ধি অবস্থার সঙ্গে সঙ্গেই তাহার বিকাশ আছে—এই জন্য ধর্ম কোনো জাতির অবিচলিত নিত্য পরিচয় হইতেই পারে না । এই জন্ত যদিচ সাধারণত সমস্ত ইংরেজের ধর্ম খ্রীস্টানধর্ম, এবং সেই ধর্মমতের উপরেই তাহার সমাজবিধি প্রধানত প্রতিষ্ঠিত তথাপি একজন ইংরেজ বৌদ্ধ হইয়া গেলে তাহার স্বত অসুবিধাই হউক তবু সে ইংরেজই থাকে। তেমনি ব্রাহ্মধর্ম আপাতত আমার ধর্ম হইতে পারে, কিন্তু কাল আমি প্রটেস্টান্ট পরগু রোম্যানক্যাথলিক এবং তাহার পর দিনে আমি বৈষ্ণব হইতে পারি, তাহাতে কোনো বাধা নাই, অতএব সে পরিচয় আমার সাময়িক পরিচয়,—কিন্তু জাতির দিক দিয়া আমি অতীতের ইতিহাসে এক জায়গায় বাধা পড়িয়াছি, সেই সুবৃহৎকালব্যাপী সত্যকে নড়াইতে পারি এমন সাধ্য আমার নাই । হিন্দুরা একথা বলে বটে আমার ধর্মটা অটল ; এবং অন্ত ধর্ম গ্রহণ করিলে তাহারা আমাকে অহিন্দু বলিয়া ত্যাগ করে। কিন্তু পূর্বেই বলিয়াছি তাহদের এই আচরণ আমার হিন্দু পরিচয়কে স্পর্শমাত্র করিতে পারে না । অনেক দিন পর্যন্ত হিন্দুমাত্রই বৈদ্যমতে ও মুসলমান হাকিমিমতে আপনাদের চিকিৎসা করিয়া আসিয়াছে। এমন কি, এমন নিষ্ঠাবতী হিন্দু বিধবা থাকিতে পারেন যিনি ডাক্তারি ঔষধ স্পর্শ করেন না। তথাপি অভিজ্ঞতার বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে হিন্দুজাতির চিকিৎসা-প্রণালী বিস্তার লাভ করিয়াছে। আজও ইহা লইয়া অনেকে আক্ষেপ প্রকাশ করিতেছেন যে বিদেশী চিকিৎসা ওআমাদের পক্ষে অস্বাভাবিক এবং ইহাতে আমাদের শরীর জীর্ণ হইয়া গেল, দেশ উজাড় হইবার জো হইল কিন্তু তবু কুইনীনমিকচ্চার ষে অহিন্দু এমন কৰা কোনো তত্ত্বব্যাখ্যার দ্বারা আজও প্রমাণের চেষ্ট হয় নাই। ডাক্তারের ভিজিটে এবং ঔষধের উগ্র উপন্দ্রবে যদি আমি ধনেপ্রাণে মরি তবু আমি হিন্দু এ কথা অস্বীকার করা চলিবে না। অথচ হিন্দু আয়ুর্বেদের প্রথম অধ্যায় হইতে শেষ পর্বস্ত খুজিলে ঔষধতালিকার মধ্যে কুইনীনের নাম পাওয়া বাইবে না। এই যেমন শরীরের কথা বলিলাম, তেমনি, শরীরের চেয়ে বড়ে জিনিসেরও কথা বলা যায়। কারণ, শরীর রক্ষাই তো মানুষের একমাত্র নছে, তাহার যে প্রকৃতি ধর্মকে